সোনারগাঁ হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্যে অসহায় রোগী
মূল ফটক, ওয়ার্ড, জরুরি সেবা, চিকিৎসকের কক্ষ, টিকেট কাউন্টারসহ পুরো হাসপাতালজুড়ে দালালদের অবাধ বিচরণ। আর সেই দালালদের দৌরাত্ম্য চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগী ও স্বজনরা অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা এমন অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের মূল ফটক, জরুরি বিভাগের ভেতরে-বাইরে, বহির্বিভাগের চিকিৎসকদের প্রায় প্রতিটি দরজার সামনে ও অন্তর্বিভাগের সবকটি ওয়ার্ডেই দালালদের অপতৎপরতা।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা জামপুরের আ. রহিম জানান, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগনির্ণয়কেন্দ্রের নিয়োগ করা দালালের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবা। দালালদের প্রতিরোধ করতে যদি ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশের অভিযান চালানো হতো তবে সাধারণ রোগীরা হয়রানি থেকে রক্ষা পেত।
হাতে অনেকগুলো টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে অপেক্ষারত আলিমুন নেছা বলেন, ‘আমি করোনা পরীক্ষা করাতে এসেছিলাম। ডাক্তার আপা আমারে ২৬শ টাকার পরীক্ষা দিয়েছে।’ তার সন্তান মুশফিক হাসান বলেন, ‘এ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে পাশের ক্লিনিক থেকে ২৬শ টাকার টেস্ট করাতে হয়। অন্যথায় করোনা টেস্ট করতে দেওয়া হয় না। তাই বাধ্য হয়েই আমরা অসহায় আত্মসমর্পণ করি।’
নোয়াগাঁওয়ের সালাম মিয়া বলেন, ‘দালালেরা প্রথমে নিজেদের হাসপাতালের কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন। তাঁরা হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কথা বলে রোগী ও স্বজনদের উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে পাশের কয়েকটি ক্লিনিকে নেওয়ার চেষ্টা করেন। রোগীদের হাসপাতালের যন্ত্রপাতি অচল ও নিম্নমানের বলে বেসরকারি রোগনির্ণয়কেন্দ্রে নিয়ে যান। হাসপাতালের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীর সঙ্গেও দালালদের সখ্য রয়েছে।’
সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. পলাশ কুমার সাহা বলেন, ‘হাসপাতালকে দালালমুক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে উপস্থাপন করেছি। এ ছাড়াও সোনারগাঁ থানা পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছি। পুরো হাসপাতালটি সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত বিধায় দালালদের দেখে সরিয়ে দিলেও পরক্ষণের আবার এস ভিড় করে। এতে আমাদের চিকিৎসা সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে প্রশাসশন এ ব্যাপারে জোড়ালো ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে।’
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে দালালদের অপতৎপরতা বন্ধ হবে।’
সুত্র:কালের কন্ঠ
আপনার মতামত জানান