ঐতিহ্যের স্মারক বরগুনার বিবিচিনি শাহি মসজিদ
দিগন্তজোড়া বর্ণিল সবুজের মাঝে উঁচু টিলার ওপর দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক বিবিচিনি শাহি মসজিদ। এ এক হৃদয়ছোঁয়া পরিবেশ, যা ভোলার নয়। দেশের অনেক দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে বিবিচিনি মসজিদ অন্যতম। এটি বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিবিচিনিতে অবস্থিত। তবে সম্প্রতি দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ঐতিহাসিক প্রাচীন এই মসজিদ প্রয়োজনীয় সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য হারাচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের ইসলাম প্রচারের কেন্দ্র হিসেবে অবহিত করা হয় এ মসজিদকে।
সপ্তদশ শতাব্দীতে ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে আধ্যাত্মিক সাধক শাহ নেয়ামতউল্লাহ এক গম্বুজবিশিষ্ট বিবিচিনি শাহি মসজিদটি নির্মাণ করেন। এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট, প্রস্থ ৩৩ ফুট। দেয়ালগুলো ৬ ফুট চওড়াবিশিষ্ট। উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুট। দক্ষিণে ও উত্তরদিকে তিন-তিনটি দরজা রয়েছে। তবে মসজিদটিতে মূল প্রবেশদ্বার একটি। মসজিদের সংস্কার কাঠামোয় প্রবেশদ্বারের মূল ফটক সংস্কার করা হলেও প্রবেশপথ এখনো অপরিসর। মসজিদের ব্যবহৃত ইটগুলো মোগল আমলের তৈরি। দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১০ ইঞ্চি এবং চওড়া ২ ইঞ্চি। সমতল ভূমি থেকে ৩০ ফুট সুউচ্চ টিলার ওপর দিগন্তের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে এ মসজিদ।
দর্শনার্থী ও নামাজিদের ওঠানামার জন্য মসজিদের দক্ষিণ পাশের ২১ ধাপবিশিষ্ট ৪৮ ফুট দীর্ঘ একটি সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়ি নির্মাণের ফলে যাতায়াতের পথ সুগম ও সহজ হলেও বর্তমানে টিলা বেয়ে মুসুল্লিদের নামাজ পড়তে ও পর্যটকদের আসা-যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়তে হয়। মসজিদের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি ব্যবহারের অনুপযগীে হয়ে আছে বহু দিন। পূর্বপাশের ২৫ ধাপবিশিষ্ট ৪৬ ফুট দীর্ঘ সিঁড়িটির অবস্থাও নাজুক। পর্যটকদের থাকার জন্য নেই কোনো ডাকবাংলো। বাউন্ডারি ওয়াল না থাকায় মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা পাচ্ছে না। সম্ভাবনাময় এ পর্যটন স্পটটি পর্যটকদের পাশাপাশি সবার হৃদয়কে আকৃষ্ট করে তুললেও পরিবেশ রক্ষার্থেও নেই তেমন কোনো উদ্যোগ। স্থানীয় কিছু লোক মসজিদের টিলার নিচের মাটি কেটে তাদের জমি বাড়িয়ে আবাদ করে টিলার ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে চলছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ মসজিদকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
দীর্ঘদিনের অরক্ষিত জরাজীর্ণ অবস্থা থাকা মসজিদটির উদ্ধারের পর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংস্কার করলেও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এ সংস্কার কাঠামোয় মসজিদের পুরনো কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে হুবহু মিল রেখে কাজ করা হয়। মসজিদের ভেতরে অবাধে বায়ু চলাচলের পথগুলো উম্মুক্ত রাখা হয়। কোনোমতে স্থাপন করা হয় বাতি ও বৈদ্যুতিক পাখা। জানা যায়, পরবর্তী সময়ে ১৯৯৩ সালে মসজিদের আরো সৌন্দর্য বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত সমপ্রসারণ ও সংস্কারের জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এক কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিলেও আজও তা আলোর মুখ দেখেনি।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্রতিদিন এখানে অগণিত নারী-পুরুষ আসে। তাদের পদচারনে মুখরিত হয় মসজিদ এলাকা। সারা বছরই কম-বেশি মানুষ ছুটে আসে এ মসজিদ ক্যাম্পাসে। ইতিহাসসমৃদ্ধ এ স্থাপত্যটি রক্ষা করা সরকার ও জনগণের নৈতিক দায়িত্ব।
সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ।
আপনার মতামত জানান