চিৎকার শুনে সাহায্য করতে আসবে ড্রোন
সুন্দরবনের গহিন জঙ্গলে হঠাৎ গেলেন রাস্তা ভুলে। মোবাইলেও নেই নেটওয়ার্ক। আপনার সঙ্গীরা এরই মধ্যে বাঘের ভয়ে শুরু করে দিয়েছে চিৎকার-চেঁচামেচি। অমনি শোঁ শোঁ করতে করতে আপনাদের সাহায্যের জন্য উড়ে এলো ড্রোন! ঘটনাটি কাল্পনিক মনে হলেও এটাই ঘটতে চলেছে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির দুনিয়ায়। সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে জানাচ্ছেন আল সানি
ড্রোন সাধারণত আনম্যানড অ্যারিয়াল ভেহিকল (ইউএভি) প্রক্রিয়ায় কাজ করে। ইউএভি আবার দুটি। একটি জেনারেল বা সাধারণ ইউএভি এবং অন্যটি সামরিক ইউএভি। আমাদের ব্যবহারযোগ্য সাধারণ ইউএভিগুলোতে একটি ক্যামেরা, পাখা আর কিছু সেন্সর থাকে। এসব সেন্সরের ভেতর থাকে কমান্ড সেন্সর, সাউন্ড সেন্সর, টেম্পারেচার সেন্সর। এসব সেন্সরের সাহায্যে ড্রোন আকাশে বাধাহীনভাবে ওড়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় তথ্যও সংগ্রহ করতে পারে। ড্রোনের সাউন্ড সেন্সর সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে জার্মানির ফ্রেঞ্চহোফার ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেশন, ইনফরমেশন প্রসেসিং অ্যান্ড আর্গনোমিকসের (এফকেআইই) গবেষকরা ‘চিৎকার অনুসন্ধানী ড্রোন’ বানিয়েছেন।
জার্মানির এই ড্রোন জরুরি পরিস্থিতিতে আটকা পড়া ব্যক্তিদের অবস্থান দ্রুত শনাক্ত করতে ও তৎক্ষণাৎ সাহায্য করতে ব্যবহৃত হবে। এই ড্রোনের সেন্সর প্যানেলে মাইক্রোফোনের মতো সাউন্ড ডিটেক্টর ও অ্যানালিটিক্যাল সিস্টেম থাকবে। যার মাধ্যমে ন্যূনতম সময়ে বিপদে পড়া ব্যক্তির কাছাকাছি অবস্থান শনাক্ত করা যায়। এফকেআইইর গবেষক ম্যাকারেনা ভেরেলা, ওল্ফ-ডিয়েটার রাইথ এবং ম্যানফ্রেড ওকুম ২০১৬ সালে সাউন্ড ডিটেকশনের অনুরূপ একটি মডেল বানিয়েছিলেন। কিন্তু ডিটেকশন প্যানেলগুলো যথেষ্ট বড় ও ভারী হওয়ায় তা ড্রোনে ব্যবহারের উপযুক্ত ছিল না। দুই বছর পর তাঁরা প্রথাগত কনডেন্সার মাইক্রোফোনের পরিবর্তে এমইএমএস (মাইক্রো-ইলেকট্রোমেকানিক্যাল সিস্টেম) মাইক্রোফোন ব্যবহার শুরু করেন। ফলে মডেলটির আয়তন ও ওজন দুটিই কমিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হন।
ড্রোন শব্দটি আমাদের কাছে পুরনো হলেও মাইক্রো-ইলেকট্রোমেকানিক্যাল সিস্টেম কথাটা কিছুটা নতুন। তবে এই মাইক্রোসিস্টেমের প্রয়োগ সাধারণত সব সময় হয়ে থাকে। বছর দশেক আগের বিশাল টেলিভিশন ছেড়ে এখন পাতলা টেলিভিশনই দেখছি আমরা, তেমনি বিশাল ওজনের ভিডিও ক্যামেরা বাদ দিয়ে এখন হালকা ও ছোট আকারের ক্যামেরা ব্যবহার করছি। এ সবই মাইক্রো-ইলেকট্রোমেকানিক্যাল সিস্টেমের উদাহরণ। গত দুই দশকের অন্যতম বড় আবিষ্কারও এটি। বিশাল আয়তনের প্রযুক্তিগুলোকে ছোট আকারে আমাদের সামনে নিয়ে আসার কৌশলের এই সিস্টেম কেবল তথ্য সংগ্রহ করার কাজই করে না, সেসব তথ্য প্রক্রিয়াজাত করতে, সঠিক লোকেশনে পাঠাতে এবং সেসব তথ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ব্যবহারও করতে পারে।
ফ্রেঞ্চহোফার ইনস্টিটিউটের ড্রোনে বর্তমানে ৩২টি মাইক্রোফোন ব্যবহৃত হচ্ছে। যাতে খুব সহজে সাহায্যপ্রার্থীর আওয়াজ শনাক্ত করা যায় এবং কত ডিগ্রিতে তিনি অবস্থান করছেন—সেটাও বুঝে নেওয়া যায়। তবে এখনো পরীক্ষামূলকভাবে এই ড্রোন নিয়ে জার্মানির ল্যাবে ব্যাপক আকারে গবেষণা চলছে।
সামনে মাইক্রোফোনের আকার আরো ছোট করে দুই গুণ বেশি মাইক্রোফোন লাগানোর পরিকল্পনা আছে গবেষকদের। এতে শব্দ শনাক্তের অঞ্চল ও পরিমাপ দুটিই বাড়বে এবং যথেষ্ট নিখুঁতভাবেই বিপদে পড়া ব্যক্তিকে সাহায্য করা যাবে।
সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ।
আপনার মতামত জানান