স্মরণঃ “খবর পড়ছি দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়”
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন নানা দেশের অজস্র সহমর্মী মানুষ। যুদ্ধের মাঠে, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে, শরণার্থী শিবিরে, প্রতিবাদে বা জনমত গঠনে কঠিন সেই সময়ে তাঁরা ভূমিকা রেখেছেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় তেমন একটি নাম। পাকিস্তানি বাহিনী যখন নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিল, তখন এ দেশের মানুষ উৎকর্ণ হয়ে শুনতে চাইত আশার বাণী। খুঁজত আশার আলো। দিনে বা রাতে যখন খবর প্রচারিত হতো স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র, আকাশবাণী কিংবা বিবিসি থেকে, মুক্তিকামী মানুষ অতিগোপনে শুনত তা।
দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৩৪ সালের ২৫ জুন নদীয়ার শান্তিপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় খবর পড়তেন পশ্চিমবঙ্গের আকাশবাণীতে। ‘আকাশবাণী কলকাতা, খবর পড়ছি দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়’— ভরাট কণ্ঠের এই সম্ভাষণ বাংলাদেশের মানুষকে আশ্বস্ত করত। তাঁর আবেগভরা কণ্ঠস্বর আশাজাগানিয়া হয়ে ওঠে যুদ্ধরত বাঙালিদের কাছে।
দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে উজাড় করে দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন শব্দসংগ্রামী হয়ে উঠেছিলেন। কোটি মানুষের আগ্রহের একটি বিন্দু হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
ভারী কণ্ঠস্বর ও অনবদ্য বাচনভঙ্গি দিয়ে শ্রোতাদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের খবর পড়তে পড়তেই বাংলাদেশের সঙ্গে গড়ে ওঠে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক। তিনি বলতেন, ‘বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় স্বদেশ।’ মানতেন, তাঁর পেশাগত জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়টা।
আকাশবাণীর সংবাদ বা সংবাদ পরিক্রমা অথবা সংবাদ সমীক্ষা পড়তেন যখন, মনে হতো তিনি নিজেই আছেন রণাঙ্গনে। মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সফল অপারেশনের খবর পড়ার সময় তাঁর কণ্ঠেও নেমে আসত উচ্ছ্বাস। করুণ কোনো হত্যাযজ্ঞের খবর পড়তে গিয়ে আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ত তাঁর কণ্ঠস্বর। বাংলার মানুষ সেই কণ্ঠস্বর শোনার জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকত।
বাংলাদেশ স্বাধীন হলে দেবদুলাল বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে প্রথম বাংলাদেশে এসেছিলেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলেন।
১৯৭২ সালে দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মশ্রী লাভ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানেরই স্বীকৃতি ছিল তা।
দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালের আজকের দিনে (২ জুন) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
সংগৃহীত
আপনার মতামত জানান