সোনারগাঁওয়ে হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে ফের উত্তেজনা, হামলা-ভাংচুর
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামে ৪ হত্যাকান্ডের ঘটনায় আবারো উত্তেজনা বিরাজ করছে। আধিপত্য বিস্তার ও একটি কোম্পানির বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে নয়াগাঁও গ্রামের আলাউদ্দিন ও সাদেকুর রহমান গ্রুপের মধ্যে এই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্রকরে গত ৯ মাসে ওই গ্রামে চারটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। রোববার সকালে উভয় পক্ষের লোকজন ওই হত্যাকান্ড নিয়ে উত্তেজিত হয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরবর্তী আলাউদ্দিনের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এসময় ১০জন আহত হয়েছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আলাউদ্দিন পক্ষের মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামের গত ১৯ ফেব্রুয়ারী রাতে হাজী আলাউদ্দিনের সঙ্গে একই এলাকার ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমান ওরফে সাদেক মোল্লার আধিপত্য বিস্তার ও একটি কোম্পানির বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে দ্বন্ধ চলে আসছে। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে ২০-২৫জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমান ওরফে সাদেক মোল্লার দোকানে হামলা চালায়। এ ঘটনায় ১০ জন আহত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারী শনিবার সকালে সাদেকুর রহমানের লোকজন দেশীয় অন্ত্রে সজ্জ্বিত হয়ে আলাউদ্দিন পক্ষের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এসময় উভয় পক্ষের লোকজন মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় দু’পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আলাউদ্দিন পক্ষের সমর আলী, জাহিদুল ইসলাম, মাহিলউদ্দিন, মোশারফ, নুর নবী, নিলা, দেলোয়ার হোসেন, আব্দুল আলীসহ ৮ জন, সাদেক পক্ষের খোরশেদ আলম, সাইদুল ইসলাম, আলী আহম্মেদ, জহিরুল ইসলাম, বিপ্লব, সুমন, শাকিল, মাহফুজ, ছোট সুমনসহ ১২ জন আহত হয়। এদের মধ্যে আলাউদ্দিন পক্ষের সমর আলী সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর মারা যান। ঘটনায় ৪দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আলী আহম্মদ ও ১৩ দিন পর সাইদুল ইসলাম গত ৫মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়াও আলাউদ্দিন পক্ষের দ্বীন ইসলামকে সাদেক পক্ষের লোকজন পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ৫টি মামলা দায়ের করা হয়। উভয় পক্ষের লোকজন হত্যা মামলায় আসামী করা হয়। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর গত এপ্রিল মাসে জামিনে আসে উভয় পক্ষের লোকজন। জামিনে আসার পর শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা।
এদিকে রোববার সকালে ওই হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় আলাউদ্দিন পক্ষের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা চালায় সাদেক পক্ষের লোকজন। হামলায় বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। এসময় ফেরদৌস, রফিক আলী, দেলোয়ার, ফরিদ আহম্মেদ, খাদিজা, মুক্তাসহ ১০জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় ২৫জনের নাম উল্লেখ করে সোনারগাঁও থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ,দীর্ঘদিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্ধ চলছে। কয়েকদিন পর পর এ এলাকায় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ৪টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে করে এ গ্রামের সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন।
সাদেকুর রহমান ওরফে সাদেক মোল্লা বলেন, আলাউদ্দিন ও তার লোকজন এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারী কাজ দখলে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ ঘটনায় আমাদের কোনঠাসা করে ফয়দা লুটার জন্য আমাদের লোকজনের উপর হামলা করে। সম্প্রতি আমাদের ২জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। রোববার চর বালাকি এলাকা থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী এনে হুমকি দিয়ে হামলা চালায়।
আলাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হামলা চালিয়ে আমার আত্মীয় সমর আলী ও ভাতিজা দ্বীন ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। গতকাল রোববার সকালে আমাদের লোকজনের বাড়িঘর ও দোকান ভাংচুর করে। এতে ১০জন আহত হয়েছে।
সোনারগাঁও থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, নয়াগাঁও গ্রামে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এ ঘটনায় একটি অভিযোগ গ্রহন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আপনার মতামত জানান