সমগ্র মুসলিম জাতি একটি দেহের ন্যায়

প্রকাশিত

বিস্তৃত পৃথিবীতে মানুষের বসবাস। বর্ণ, গোত্র, পেশা, ভাষা ও অঞ্চলের ভিন্নতা সত্ত্বেও ঈমান ও ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে সব মুসলমান এক জাতি হিসেবে পরিগণিত। সব মুসলমান সাক্ষ্য দেয় যে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। সবাই এক কিবলার দিকে ফিরে নামাজ আদায় করে, একই মাসে রোজা পালন করে এবং একই স্থান ও কালে হজ সম্পাদন করে। সব মুসলমান মিলে যেন একটি দেহ। কাজেই পরস্পরের সুখ-দুঃখে অন্যের উপস্থিতি একান্ত কাম্য বিষয়।

আদর্শের ভিত্তিতে ভ্রাতৃত্ববোধ : একটি আদর্শের ভিত্তিতে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছে ইসলাম। বর্ণ, গোত্র, পেশা, ভাষা অথবা অঞ্চল মানুষের মৌলিক পার্থক্য নির্দেশ করে না। মৌলিক পার্থক্যের একমাত্র ভিত্তি হলো আদর্শ। একটি আদর্শ গ্রহণ বা বর্জনের সূত্রে বিপরীতমুখী দুটি ধারা তৈরি হয়। এ জন্য আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)

পরস্পর সহানুভূতিশীল হওয়া : সব মুসলমান এক আল্লাহ, মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়ত ও কোরআন মাজিদে বিশ্বাসী এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদর্শের অনুসারী। এটিই মুসলমানের ঐক্যের ভিত্তি। তারা পরস্পর ভাই ভাই। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১০)

ভাই ভাইয়ের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে, এটিই স্বাভাবিক। আল্লাহ আরো বলেন, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল; তাঁর সহচররা অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল।’ (সুরা ফাতাহ, আয়াত : ২৯)

সবাই যেন এক দেহ : আদর্শের এ ভ্রাতৃত্ব কোনো ধরনের সংকীর্ণতা বা সীমাবদ্ধতার দ্বারা আবদ্ধ নয়। পৃথিবীর এক প্রান্তের বা এক ভাষার একজন মুসলমান আদর্শের টানে অন্য প্রান্তের বা অন্য ভাষায় আরেকজন মুসলমানের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে একই দেহের দুই অঙ্গের মতো একে অন্যের দুঃখে দুঃখিত হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সব মুসলমান একটি দেহের মতো, যদি তার চোখ অসুস্থ হয় তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়; যদি তার মাথা অসুস্থ হয় তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৭৫৪)

নিজেদের মধ্যে বিবাদ পরিহার : মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে কোনো বিষয়ে দ্বন্দ্ব-মতানৈক্য দেখা দিলে সেগুলো নিজেরাই সংশোধন করে নেওয়া উচিত। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-ফাসাদ থাকলে নিজেদের শক্তি-সাহস দুর্বল হয়ে যায়, ফলে শত্রুপক্ষ বিজয়ী হওয়ার সুযোগ পায়। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবে; আর তাদের একদল অপর দলের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করলে যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সঙ্গে ফয়সালা করবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ৯)

আল্লাহ আরো বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে ও নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। তোমরা ধৈর্য ধারণ করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৪৬)

পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি : নিজেরা নিজেদের দ্বন্দ্ব-ফাসাদ দূর করে পরস্পর পরস্পরের প্রতি আন্তরিক হলে আল্লাহ সবার মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি সৃষ্টি করে দেবেন। পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি খুবই জরুরি বিষয়। আল্লাহ বলেন, ‘এবং তিনি তাদের (মুমিনদের) পরস্পরের হৃদয়ের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন। পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ ব্যয় করলেও তুমি তাদের হৃদয়ে প্রীতি স্থাপন করতে পারতে না; কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন; নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৬৩)

অমুসলিমদের সহযোগিতার সীমারেখা : সব মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং অন্যের প্রয়োজনে এগিয়ে আসা ইসলামী সমাজব্যবস্থার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। এটি মুসলিম-অমুসলিম সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না এবং মুসলমানদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করার অপচেষ্টা করে না, তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন করতে আল্লাহ নিষেধ করেন না। আল্লাহ বলেন, ‘দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেনি তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : মুমতাহিনা, আয়াত : ৮)

কিন্তু যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং মুসলমানদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করার অপচেষ্টা করে, তারা মুসলমানদের সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। পরিশেষে বলা যায়, পৃথিবীর সব প্রান্তের সব মুসলমান মিলে যেন একটি দেহ। ঈমানি বন্ধনে আবদ্ধ একে অন্যের ভাই। ভাইয়ের সুখে খুশি হওয়া আর দুঃখে দুঃখিত হয়ে দুঃখ মোচনে যথাসাধ্য চেষ্টা করা ঈমানি বন্ধনের অন্যতম দাবি। কমপক্ষে ব্যথিত হৃদয় নিয়ে নিপীড়িত মুসলমানদের পক্ষাবলম্বন ও তাদের মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার সামর্থ্য তো সবার রয়েছে। সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ।

আপনার মতামত জানান