১৬০ যুদ্ধবিমান নিয়ে ইসরায়েলের অভিযান, সর্বাত্মক যুদ্ধের শঙ্কা
গাজার ফিলিস্তিনিদের কাছে ঈদের পরদিন ভোরটি দুঃস্বপ্ন ভরা ছিল। এদিন ১৬০ টি যদ্ধবিমান নিয়ে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সঙ্গে ট্যাঙ্কের বহরও হামলায় অংশ নিয়েছিল। সাঁড়াশি এই অভিযানে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১৩ জন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ১২৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩১ শিশু রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন ১ হাজারের কাছাকাছি। গাজা থেকে হামলা বন্ধ করতে এই অভিযান চালানোর কথা ইসরায়েল বললেও তাতেও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গ্রুপ হামাসের পাল্টা রকেট নিক্ষেপ থামেনি।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জনাথন কনরিসাস জানিয়েছেন, ৪০ মিনিটের এই অভিযানে ৪৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। গাজার ১৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছোড়া হয়।
১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করে গাজার চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে এক নারী ও তার তিন শিশু সন্তানও রয়েছেন। ইসরায়েলি কামানের গোলায় তাদের বাড়িটি গুঁড়িয়ে গিয়েছিল। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে বের করা হয় চারটি লাশ।
এছাড়া গাজার বিপরীত পাশে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সাত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় চিকিৎসাকর্মীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স। প্রায় আট দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে সঙ্কট হিসেবে জিইয়ে আছে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব; আর ২০১৪ সালের পর এবারই সবচেয়ে বড় সংঘাত চলছে।
নতুন করে সংঘাতের শুরুটা হয়েছে ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসা কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে। এরপর ইসরায়েলের ‘জেরুজালেম দিবস’ পালনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়।
জেরুজালেমের দুই অংশের মধ্যে পূর্ব অংশে মূলত মুসলমান ফিলিস্তিনিদের বাস, পশ্চিম অংশ ইসরায়েলি অধ্যুষিত। পূর্ব জেরুজালেমেই মসজিদ আল-আকসা, আর একে রাজধানী করেই ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
পূর্ব জেরুজালেমের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনিদের বিভক্ত দুই অংশের অন্য দিকে গাজায় দেখা দেয় বিক্ষোভ। তারপর থেকে একদিকে ইসরায়েলি সেনারা গাজায় গোলাবর্ষণ করছে, অন্যদিকে রকেট হামলা চালিয়ে তার জবাব দিচ্ছে গাজাবাসী ফিলিস্তিনিরা বিশেষ করে হামাস।
একদিকে ইসরায়েলি সেনারা গাজায় গোলাবর্ষণ করছে, অন্যদিকে রকেট হামলা চালিয়ে তার জবাব দিচ্ছে গাজাবাসী ফিলিস্তিনিরা। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি প্রধান পূর্ব জেরুজালেমেও ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা।
রয়টার্স জানিয়েছে, গত সোমবার থেকে ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর শুধু গাজায় এই পর্যন্ত ১২৬ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জন নারী ও ৩১টি শিশু রয়েছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন আটজন। এর মধ্যে একজন সৈন্য। নিহতদের মধ্যে দুটি শিশুও রয়েছে। ভারতের এক কর্মীও নিহতদের মধ্যে রয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে কর্মরতরা জানিয়েছে, শুক্রবারের হামলায় গাজায় অন্তত ২০০টি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, এগুলোর বাসিন্দা শত শত মানুষ নানা বিদ্যালয় ভবনে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বিমান হামলায় মধ্য গাজায় ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের তিন শীর্ষস্থানীয় নেতার বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার ন্যাশনাল প্রডাকশন ব্যাংক ভবনও।
ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বেসামরিক মানুষের প্রাণক্ষয় এড়িয়ে এই হামলা চালাচ্ছে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি দল হামাসের বিরুদ্ধে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল জনাথন কনরিসাস বলেছেন, ‘যে সুড়ঙ্গগুলো হামাস যোদ্ধারা লুকানোর কাজে ব্যবহার করে, সেগুলো লক্ষ্য করেই বিমান হামলা চালানো হচ্ছে’।
তবে চিত্রটা ভিন্ন পাওয়া যায় ১৯ মাসের ভাগ্নেকে হারানো খামিস আল-রানতিসির কথায়। গাজার রাফা শহরে এক দিন আগেই ইসরায়েলি গোলায় উড়ে গিয়েছিল তাদের ভবন, নিহত হয়েছিল শিশুটি। কাফনে মোড়ানো ভাগ্নেকে কবর দিতে নেওয়ার সেময় আল-রানতিসি বলছিলেন, ‘কী করেছিল এই শিশুটি? ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্য কী হুমকি ছিল সে?’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করেই গাজায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামাসকে চরম জবাব দেওয়ার আগে কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতির কথাও নাকচ করছেন ইহুদীবাদী দেশটির সামরিক কর্মকর্তারা।
উল্টো ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সীমান্তে যেভাবে সৈন্য সংখ্যা বাড়িয়ে ট্যাংক, কামান জড়ো করেছে, তাতে ২০১৪ সালের মতো আরেকটি স্থল অভিযানের শঙ্কাই উঁকি দিচ্ছে। সূত্রঃ কালেরকন্ঠ।
আপনার মতামত জানান