সাইনবোর্ড মোড় থেকে বাস-মাইক্রোবাস সবই চলছে দ্বিগুণ-তিন গুণ ভাড়ায়
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে বেশি ভাড়া দিয়ে পিকআপভ্যানে করে বাড়ি যাচ্ছেন মানুষ। আজ রোববার সকাল ৭টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায়দিনার মাহমুদ
স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে আজ রোববার সকাল পৌনে সাতটায় নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এসেছেন ব্যবসায়ী আকমল হোসেন (৩৮)। মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে চট্টগ্রাম যাবেন। সকাল সোয়া সাতটায় জনপ্রতি এক হাজার টাকা ভাড়ায় একটি মাইক্রোবাসে চড়ে বসে পরিবারটি। ভাড়া নিয়ে ভাবনা নেই। প্রত্যাশার চেয়েও সহজে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, এতেই খুশি।
আকমল হোসেন যখন মাইক্রোবাসে চড়ে বসেছেন, ঠিক তখন সাইনবোর্ড মোড় এলাকার প্রায় ৩০০ মিটার এলাকাজুড়ে বিভিন্ন বাস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান ডেকে ডেকে যাত্রীবোঝাই করছে। স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ-তিন গুণ ভাড়ায় চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যাচ্ছে এসব পরিবহন।
আজ সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় থেকে শিমরাইল মোড় পর্যন্ত এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। এসব এলাকায় দুটি পুলিশ বক্স থাকলেও সকাল নয়টা পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধে পুলিশের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
সকাল সাতটায় সাইনবোর্ড ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে গিয়ে দেখা যায় ভাড়ায় চালিত বেশ কিছু মাইক্রোবাস ও বাস দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রীবোঝাই করছে। পাশেই একজন ট্রাফিক পুলিশ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন। সকাল সোয়া সাতটায় পুলিশ বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে ‘জরুরি স্বাস্থ্যসেবা’ স্টিকার লাগানো সাদা একটি মাইক্রোবাসকে লক্ষ্মীপুরের যাত্রী বোঝাই করতে দেখা গেছে। একই সময়ে ১৭ জন যাত্রী নিয়ে একটি কালো মাইক্রোবাস কুমিল্লার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আরও অন্তত ২৭টি মাইক্রোবাসকে লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ফেনীসহ বিভিন্ন রুটের যাত্রী বোঝাই করতে গেছে।
সকাল সাতটা থেকে আটটা পর্যন্ত পুলিশ বক্সের পাশে থাকা দূরপাল্লার একটি পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে যাত্রীদের জটলা দেখা গেছে। এই কাউন্টার থেকে চট্টগ্রাম ও ফেনী উদ্দেশে মাইক্রোবাস ছেড়ে যাচ্ছিল। কাউন্টারে থাকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পরিবহনশ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা কয়েকজন শ্রমিক মিলে মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাত্রী পরিবহনের কাজ করছেন। ফেনীতে জনপ্রতি ৭০০ ও চট্টগ্রামে ১ হাজার টাকা করে ভাড়া নিচ্ছেন তাঁরা। যাত্রী পরিবহনে পুলিশ বাধা আছে কি না, তা জানতে চাইলে একগাল হেসে জানালেন, সাইনবোর্ড ও চিটাগাং রোড এলাকার জন্য গাড়িপ্রতি ১ হাজার ৫০০ টাকায় পুলিশের অনুমতি নিতে হয়। তারপর চট্টগ্রামের পথে আরও খরচ আছে।
সকাল সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত রয়েল কোচ, শুভযাত্রা পরিবহন, শাহ সুন্দর পরিবহন, মনোহরদী পরিবহন, লিজা মারিয়া পরিবহন, নাফ পরিবহন, অনি পরিবহনসহ অন্তত ১৪টি পরিবহনের বাস কোনো বাধা ছাড়াই সাইনবোর্ড ও শিমরাইল মোড় থেকে ছেড়ে গেছে।
পিয়াস আলম নামের কুমিল্লাগামী এক যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো উপায়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যেতে চান তিনি। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে বলে ক্ষুব্ধ এই তরুণ।
সকাল আটটায় সাইনবোর্ড মোড়ে কথা হয় আমেনা বেগম নামের এক বৃদ্ধার সঙ্গে। একাই রওনা হয়েছেন নোয়াখালীর চৌমুহনীর উদ্দেশে। লকডাউনে একা একা কেমন করে বাড়ি যাবেন, তা জানতে চাইলে বৃদ্ধার সরল উত্তর, ‘বাস, মাইক্রোবাস সবই চলে, টেকা থাকলে গাড়ির অভাব নাই।’ এর কিছুক্ষণের মধ্যেই নারী–শিশুসহ ১১ জন যাত্রী নিয়ে কুমিল্লার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করা একটি পিকআপ ভ্যানের পেছনে উঠে বসেন বৃদ্ধা। বৈশাখের রোদ মাথায় নিয়ে জনপ্রতি ১৫০ টাকা ভাড়ায় আপাতত গৌরীপুর পর্যন্ত যাবেন তিনি।
সকাল নয়টা পর্যন্ত ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেলা বাড়ার সঙ্গে যাত্রী বাড়তে দেখা গেছে। সঙ্গে চাহিদা অনুযায়ী বাড়ছে বিভিন্ন পরিবহনের বাস ও ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস। বাড়তি ভাড়াসহ নানা ঝামেলা মাথায় নিয়েই গন্তব্যে ছুটছেন যাত্রীরা।
সূত্রঃ প্রথম আলো
আপনার মতামত জানান