রোজা রাখলে গ্যাস্ট্রিকের কোনো অসুবিধা হবে কি?

প্রকাশিত

রোজার সময় খুব সাধারণ একটা প্রশ্ন বেশি বেশি শোনা যায়, রোজা রাখলে এসিডিটির কোনো সমস্যা হবে কি না? কিংবা রোজা রাখলে গ্যাস্ট্রিকের কোনো অসুবিধা হবে কি না?

পাকস্থলীতে প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই লিটার হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরিত হয়, যার কাজ হচ্ছে পাকস্থলীতে খাবার পরিপাকে সহায়তা করা। কোনো কারণে পাকস্থলীতে এই হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণের মাত্রা বেড়ে গেলে পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ আবরণ তথা মিউকাস মেমব্রেনে প্রদাহ তৈরি হয়। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় গ্যাস্ট্রাইটিস বলে। অতিরিক্ত খাবার খেলে, অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে, বেশি বেশি তৈলাক্ত খাবার খেলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায় এবং প্রদাহ হয়, যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলে পরিচিত।

উপসর্গ
♦ পেটের উপরি অংশে ব্যথা

♦ বুক জ্বালাপোড়া করা

♦ খাবারের আগে ও পরে পেট ব্যথা

♦ খাবারের সময় বুকে বাধা অনুভব

♦ ঢেকুর আসা

♦ বমি বমি ভাব ও খাবারের চাহিদা কমে যাওয়া

♦ অল্প খাবারেই পেট ভরে গেছে মনে হওয়া ইত্যাদি।

সুস্থ মানুষ রোজা রাখলে এসিডিটি হওয়ার তেমন আশঙ্কা নেই, যদি তিনি ইফতার ও সাহরিতে কিছু নিয়ম মেনে চলেন।

ইফতারির সময় করণীয়
♦ অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার বা তেলে ডুবিয়ে তৈরি করা পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি ইত্যাদি যতটুকু সম্ভব পরিহার করা উচিত।

♦ একসঙ্গে অনেক বেশি খাবার খাওয়া উচিত নয়। অনেকে ইফতারি খেতে খেতে ইসোফেগাস তথা গলবিল পর্যন্ত খেয়ে ফেলেন, যা ঠিক নয়।

♦ ইসপগুলের শরবত, ডাবের পানি, খেজুর, পেয়ারা, ছোলা, সেমাই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

♦ ইফতার হতে হবে লাইট মিল বা অল্প পরিমাণ। এরপর মাগরিবের নামাজ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে নেওয়া ভালো। সম্ভব হলে তারাবির নামাজের আগেই খেয়ে নিন। এতে খাবারের পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে নামাজ পড়তে গেলে নামাজের সময় একপ্রকার ব্যায়াম হয়ে যাবে, যা খাবার পরিপাকে সহায়ক। এতে এসিডিটি হওয়ার ঝুঁকিও কমবে।

♦ এসিডিটি থেকে বাঁচার জন্য রাতের খাবার বা সাহরি উভয় ক্ষেত্রে শোবার এক ঘণ্টা আগে শেষ করতে হবে এবং খেয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে ঘুমাতে যাওয়া ভালো। অন্যথায় এসিডের ব্যাক ফ্লো হয়ে GERD-এর মতো রোগ হতে পারে।

♦ টকজাতীয় ফলে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ থাকে, আবার সাইট্রিক এসিডও থাকে। তাই রোজার সময় টক ফল সাবধানতার সঙ্গে খেতে হবে। ভালো হয় রাতের খাবার শেষ করে খেতে পারলে।

♦ ইফতারির সময় অনেকের প্রিয় খাবার টমেটো। এতে প্রচুর সাইট্রিক এসিড ও ম্যালিক এসিড থাকে, যা পাকস্থলীতে ইরিটেশন করে। তাই টমেটো বেশি না খাওয়াই উত্তম।

♦ ঝাল খাবার পাকস্থলীতে এসিডিটির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই কাঁচা মরিচ বা অতিরিক্ত ঝাল খাবার পরিহার করা উচিত।

♦ গরম পানীয় যথা চা, কফি ইত্যাদি পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই রোজার সময় চা, কফি ইত্যাদি পরিহার করা উচিত।

সাহরির সময় করণীয়
ফজরের নামাজের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত সাহরি খাওয়া যায়। রাসুল (সা.) দেরিতে সাহরি করার কথা বলেছেন, যা সুন্নত। এই সুন্নত পালনের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। দেরিতে সাহরি করতে এই কারণে বলা হয়েছে যেন সাহরি করে ফজর নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া যায়। আর ফজরের প্রস্তুতি নিয়ে নামাজ শেষ করে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে যে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগবে তা খাবার পরিপাকে সহায়তা করে। যদি কেউ ফজরের সময় হওয়ার এক-দুই ঘণ্টা আগে সাহরি খান, তাহলে তিনি তো আর সাহরি শেষ করে দুই ঘণ্টা বসে থাকবেন না, বরং শুয়ে পড়বেন। আর খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়া এসিডিটির অন্যতম কারণ। তাই দেরিতে সাহরি করা সুন্নত আর সাহরি করে নামাজ পড়ে তারপর ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্যও উত্তম।

সাহরির কিছু খাবার যা পাকস্থলীতে এসিডিটি করে, যেমন—চর্বিজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, চা, কফি ইত্যাদি পরিহার করা শ্রেয়।

চিকিৎসা
মূলত যাঁদের এসিডিটির সমস্যা কিংবা গ্যাস্ট্রিক রোগ রয়েছে, তাঁরা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে পারেন চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে। গ্যাস্ট্রিকের কয়েক ধরনের ওষুধ রয়েছে, এর মধ্যে অ্যান্টাসিড বা ল্যান্সোপ্রাজল ক্যাপসুল খাওয়া যেতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শে। অ্যান্টাসিড প্লাস সিরাপ সন্ধ্যায় খাবারের পর খাওয়া যায় আর ল্যান্সোপ্রাজল ক্যাপসুল ভোর রাতে খেলে উপকার পাওয়া যায়। ল্যান্সোপ্রাজলের কার্যকারিতা দীর্ঘ সময় থাকে।

ওষুধ গ্রহণের পরও যদি কারো রোজা রাখতে বেশি কষ্ট হয় বা বুকে ব্যথা ওঠে, তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে রোজা ভঙ্গ করার অবকাশ রয়েছে।

সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ

আপনার মতামত জানান