মন্ত্রিপুত্রের পিএস হীরা রূপগঞ্জের আতঙ্ক

প্রকাশিত


নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীরপ্রতীক) পুত্র গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পার একান্ত সহকারী (পিএস) কামরুজ্জামান হীরার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত সোমবার রাতে হীরার নেতৃত্বে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া এলাকায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলম জেমিনের বাড়িঘরে লুটপাট, বড়ালু এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর এবং পাড়াগাঁও এলাকায় নিরীহ ব্যবসায়ীদের দোকানপাটে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় হীরার বিরুদ্ধে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলা নং-৩৩।

কায়েতপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলম জেমিন জানান, মন্ত্রী বলয়ের সঙ্গে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের জের ধরে তাঁকেসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ফাঁসাতে হীরা তাঁর নিজের ফাঁকা গাড়িতে গুলিবর্ষণের নাটক সাজান। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার রাতে হীরার নেতৃত্বে চনপাড়া বস্তির সন্ত্রাসী শমসের, স্বপন, মিল্লাত, ফারুক মেম্বার, রাসেলসহ ২৫-৩০ জন তাঁর বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় তাঁরা বাড়ির মেইন গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে পিস্তলের বাঁট দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। তাঁকে বাঁচাতে তাঁর পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে এলে তাঁর ভাবি রিয়া, বড় ভাই আহম্মদ হাসান সৈকত এবং চার বছরের ভাতিজি আফিফাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। পরে তাঁরা বাড়ি থেকে প্রায় ১৬ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যান। হামলাকারীরা বড়ালু এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর এবং পাড়াগাঁও এলাকার রনী ও ইস্রাফিলের কনফেনশনারি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালান।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কামরুজ্জামান হীরা রূপগঞ্জে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, জমি দখলসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত। ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পল্টনে মন্ত্রীর ব্যাবসায়িক কার্যালয়ে গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেনের পেটে গুলি করে। এ ঘটনায় পল্টনের তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলাম হীরাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেন। ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি ভুলতা এলাকার ডায়মন্ড ব্রিকস টাইলস প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির সময় হীরাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই সময় মন্ত্রী গণমাধ্যমে প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে হীরার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন। এ ঘটনায় হীরা জেল খেটে সম্প্রতি মন্ত্রীর পুত্র গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পার একান্ত সহকারী পরিচয়ে রূপগঞ্জে ফিরে এসে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেন। তাঁর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল বিকেলে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। এ সময় হীরাকে চাকরিচ্যুত করতে মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। হীরার বক্তব্য নিতে বারবার চেষ্টা করেও তাঁর মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন রূপগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি খন্দকার আবুল বাশার টুকু, থানা আওয়ামী লীগের সাবেক কার্যকরী সদস্য করিম পাঠান, থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক মিলন, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাজি ইয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল আউয়াল, সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আজগর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা জামান ব্যাপারী, ওসমান গনি, উপজেলা যুবলীগ নেতা হাজি সফিকুল ইসলাম, আমির হোসেন স্বপন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মহিউদ্দিন মেম্বার, আরজু মিয়া, মোশারফ হোসেন মেম্বার, ছাত্রলীগ নেতা লুৎফর রহমান মুন্না, মহিলা লীগ নেত্রী স্বপ্না আক্তার, ইয়াছমীন আক্তার, ইউপি সদস্য হাজি মতিন, আব্দুল হাই প্রমুখ।

রূপগঞ্জ থানার ওসি মহসিনুল কাদির বলেন, সোমবার রাতে ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় হীরাকে প্রধান আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।
সুত্র: কালের কন্ঠ

আপনার মতামত জানান