৪র্থ দিনেও কাজ চলছে তেঁতুলতলা মাঠে

প্রকাশিত

তেঁতুলতলা মাঠে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এলাকাবাসীর কোনো কথা শুনছে না তারা। আগের মতো পুলিশি পাহারায় নির্মাণকাজ চলছে। পুলিশ বলছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই নির্মাণ কাজ চলছে।

বুধবার (২৭ এপ্রিল) সকালে এ নির্মাণ কাজের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপস্থিত একাধিক পুলিশের সদস্যরা বলেন, কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে ৪র্থ দিনের মতো থানা তৈরির কাজ চলছে।

তারা আরও বলেছেন, সরকারি জায়গায় থানা তৈরির জন্য সকল বিধি মানা হয়েছে। জায়গায় কোনো প্রকার সমস্যা নেই, ভূমি মন্ত্রণালয় থানা তৈরির জন্য কাগজপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থানা তৈরির আদেশ দেয়। এখানে আমাদের পুলিশের কোনো প্রকার ঘাটতি নাই।

থানা স্থাপনের এই কাজ চলার সময় দেখা যায়, ৯ জন রাজমিস্ত্রি কাল রাত থেকে কাজ করছেন। রাজমিস্ত্রি রশিদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আরও ৫ জন মিস্ত্রি আসতেছে।

১৮ জন পুলিশের (নিরাপত্তায়) উপস্থিতিতে কাজ করছে। তবে গতকালের মতো আজ ঘটনাস্থল ও আশেপাশে শিশুদের দেখা যায়নি। দেখা গেছে, সীমানা তৈরীর ১২ টি পিলার ইতিমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে।

ডিউটিরত সাব-ইন্সপেক্টর জহিরুল ইসলাম বলেন, থানা থেকে আমাদের সব সময় একটি টহল গাড়ি ঘটনাস্থলে রাখা হয়েছে। কাজ বন্ধ করার কোনো নির্দেশনা এখনও পাইনি এজন্য কাজ চলছে।

এদিকে তেঁতুলতলা মাঠের জমি কীভাবে থানা ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হয়েছে, সেই ব্যাখ্যা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারের সব বিধি মেনে সরকারি এ সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, সকল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে থানা স্থাপন করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটি বরাদ্দ করেছে।

তিনি বলেন, রাজধানীর কলাবাগানে ‘তেঁতুলতলা খেলার মাঠে’ নয়, জনস্বার্থে সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাওয়া জমিতেই নির্মাণ করা হচ্ছে কলাবাগান থানা। ডিএমপি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার জমিতে বেআইনিভাবে থানা ভবন নির্মাণ করছে না। বিকল্প খেলার মাঠের ব্যবস্থার বিষয়টি ডিএমপির এখতিয়ারভুক্ত নয়।

তিনি বলেন, জনস্বার্থে কলাবাগান থানার জন্য ধানমন্ডি মৌজার ০.২০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭-এর সব বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়েছে। কলাবাগান থানার জন্য অধিগ্রহণকৃত ০.২০ একর জমি জরিপ অনুযায়ী সরকারি সম্পত্তি এবং সরকারের পক্ষে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন। কলাবাগান থানার জন্য ০.২০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া যায়। এরপর সেখানে থানা তৈরির কাজ শুরু করা হয়।

তথ্য মতে জানা যায়, এটি নিয়ে সরকারের কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটিতে কলাবাগান থানার জন্য ০.২০ একর জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জমির ক্ষতিপূরণ মূল্য বাবদ ডিএমপি কমিশনার বরাবর ২৭ কোটি ৫৪ লাখ ৪১ হাজার ৭১০/৯২ টাকার প্রাক্কলন প্রেরণ করেন ঢাকার জেলা প্রশাসক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সে টাকার ব্যয় মঞ্জুরি পাওয়া যায়। ঢাকা জেলা প্রশাসককে প্রাক্কলিত টাকা চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। গত ৩১ জানুয়ারি ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় কর্তৃক সরেজমিনে ডিএমপিকে জমির দখলভার হস্তান্তর করে। কলাবাগান থানার ০.২০ একর জমি অধিগৃহীত ও দখল হস্তান্তর বিষয়ে বাংলাদেশ গেজেটের ৬ষ্ঠ খণ্ডে ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়। গত ২৭ মার্চ জমির নামজারি ও জমাভাগকরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।

পুলিশ বলছে, প্রস্তাবিত থানার জায়গা তেঁতুলতলা মাঠ থেকে কিছুটা দূরেই কলাবাগান মাঠ রয়েছে। সেখানে বাচ্চাদের খেলাধুলাসহ সামাজিক অনুষ্ঠানের সুযোগ রয়েছে। জনস্বার্থে সরকার কলাবাগান থানা নির্মাণের জন্য প্রচলিত আইন মেনে জমি বরাদ্দ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ডিএমপি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার জমিতে বেআইনিভাবে থানা ভবন নির্মাণ করছে না। বিকল্প খেলার মাঠ ব্যবস্থার বিষয়টি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এখতিয়ারভুক্ত নয়।

কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠটি রক্ষার দাবিতে আন্দোলনে নামায় গত রবিবার ১৩ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখা হয় স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দা রত্না ও তার কিশোর ছেলেকে। প্রতিবাদের মুখে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। এলাকাবাসীর দাবি, মাঠটিতে স্থানীয় শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করে। জানাজা, ঈদের নামাজ, জাতীয় দিবসগুলোতে অনুষ্ঠানসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান হয় ওই মাঠে। এলাকাবাসী মাঠটি খালি রেখে কলাবাগান থানা ভবন অন্য কোথাও নির্মাণের দাবি করছেন।

মাঠটি রক্ষার দাবিতে গত সোমবার ১২টি সংগঠন ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছে। ১৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও ৩৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক আলাদা দুটি বিবৃতিও দিয়েছেন। গত সোমবার বিকালে মাঠটিতে একটি প্রতিবাদ সমাবেশও হয়।

নির্মাণশ্রমিকেরা জানান, সোমবার ও মঙ্গলবার মধ্যরাতের মধ্যেই সীমানাপ্রাচীরের পিলারের ঢালাই কাজ হয়। ইতিমধ্যে পিলারের রডও দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন।

অবশ্য এলাকাবাসী বলছেন, ঢাকায় উন্মুক্ত জায়গা ও খেলার মাঠ একেবারেই কম। কলাবাগানের ওই এলাকার এক লাখ মানুষের জন্য উন্মুক্ত জায়গা ও খেলার মাঠ হিসেবে তেঁতুলতলা মাঠটি ব্যবহৃত হয়। সেটা যদি আইনি প্রক্রিয়া মেনে বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেটাও ঠিক হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলাবাগান থানার ওসি (অপারেশন) জাফর বলেন, আমরা মাঠে থেকে কাজ করছি এবং সরকারি আদেশ পালন করছি। কে কী বলল সেটা তো আমাদের দেখার দরকার নেই। যদি কাজ বন্ধের কোনো আদেশ আসে তাহলে সেটা দেখে আমরা কাজ বন্ধ করে দেবো।

এ বিষয়ে জনতে চাইলে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র বলেন, জায়গাটির মালিক ওসি বা থানার নয়, এটি ভূমি মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করেছে। যতটুকু জানি এই জায়গার মালিক জেলা প্রশাসক। সেখানে খোঁজখবর নিলে হয়তো ভালো তথ্য জানতে পারবেন। এই জায়গা নিয়ে আমাদের কোনো ইন্টারেস্ট নাই। সরকারি জায়গায় থানা ভবন তৈরির জন্য আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা আমরা পালন করছি। আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা এলে আমরা কাজ বন্ধ করে দেবো।

রাতদিন শ্রমিকরা থানা তৈরির কাজ করছে কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রমজানের সময় হয়তো দিনে শ্রমিকদের কাজের সুবিধা হয়। তারা যেভাবে চায় সেই ভাবেই কাজ করতে পারে, এতে দিন রাত নেই। আমরা তো শ্রমিকের দায়িত্ব নেইনি। কাজ যাতে বন্ধ না হয় সেই বিষয়টি আমরা লক্ষ রাখছি।’

আপনার মতামত জানান