২০ হাজার শ্রমিক থেকে ১৪০০ কোটি টাকা নিয়ে এমপি লাপাত্তা

প্রকাশিত

কুয়েতে তিন বাংলাদেশি প্রতারণার মাধ্যমে নিজ দেশের ২০ হাজারের বেশি শ্রমিকের কাছ থেকে বাংলাদেশি মুদ্রায় এক হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই তিনজনের মধ্যে একজন সংসদ সদস্য (এমপি)। এঁদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, মানবপাচার ও ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। কুয়েতের আরবি ভাষার দৈনিক সংবাদপত্র আল-কাবাস এবং ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমস এ তথ্য প্রকাশ করেছে। তবে বাংলাদেশের কোন সংসদ সদস্য এই কারবারে জড়িত তা প্রকাশ করেনি।

আরব টাইমস দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ও দৈনিক আল-কাবাসের বরাতে জানায়, এক বাংলাদেশিকে অর্থ ও মানবপাচার এবং ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তিনজনকে নিয়ে গঠিত ওই মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য তিনি। চক্রের বাকি দুই সদস্য কুয়েত ছেড়ে পালিয়েছেন। এঁদের মধ্যে একজনের পরিচয় হিসেবে বলা হয়েছে, তিনি বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য। অপর একজনকে ‘এস’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি ইউরোপে পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত কারো নামই প্রকাশ করা হয়নি। প্রতিবেদন অনুসারে, অভিযুক্তরা কুয়েতের তিনটি বড় প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিককে কুয়েতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব শ্রমিককে কুয়েতে পাঠানোর বিনিময়ে পাঁচ কোটি কুয়েতি দিনার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক হাজার ৩৯৮ কোটি টাকার বেশি নিয়েছেন তাঁরা।

আরব টাইমস আরো জানায়, অভিযুক্ত এমপি দেশের একটি বড় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেরও সদস্য এবং প্রায়ই তিনি কুয়েতে যাতায়াত করেন।

কুয়েতে প্রায়ই যাতায়াত করেন এবং সেখানে ব্যবসা রয়েছে এমন সংসদ সদস্যদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম। ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে ওই মানবপাচারের ঘটনায় তাঁর নাম উঠে এসেছে। কিন্তু মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, “বাংলাদেশের অন্তত ১০ জন সংসদ সদস্য ম্যানপাওয়ারের ব্যবসা করেন। কুয়েতের গণমাধ্যমগুলো একজন এমপির কথা বলেছে। সেসব গণমাধ্যমে আমার নাম বলা হয়নি। ব্যক্তিগত জীবনে আমি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। আমি দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে কুয়েতে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছি। কুয়েতসহ কোথাও আমার ম্যানপাওয়ারের ব্যবসা নেই। আমার ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘মারাফি কুয়েতিয়া’ সেখানে সরকারি প্রকল্প ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কনট্রাক্টিং, ইঞ্জিনিয়ারিং ও সরবরাহকারী হিসেবে সুনামের সাথে ব্যবসা করে আসছে। কুয়েত পুলিশ আমাকে নিরাপত্তা পাসও দিয়েছে, যা সহজলভ্য নয়।”

মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম আরো বলেন, ‘আমার কোনো ব্যাবসায়িক প্রতিপক্ষ এই ঘটনায় হয়তো আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করছে। আমার প্রতিষ্ঠানের ব্যাবসায়িক সাফল্যের কারণে সেখানে অন্য কয়েকটি দেশের ব্যবসায়ীরাও ঈর্ষান্বিত।’ তিনি আরো বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে আমি কুয়েত থেকে দেশে এসেছি সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য।’

এদিকে আল-কাবাস তাদের গত বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশি ওই এমপি সম্প্রতি কুয়েতে একজন মার্কিন বাসিন্দার সঙ্গে আর্থিক অংশীদারি গড়ে তোলেন। কুয়েতে আয় করা বেশির ভাগ অর্থই তিনি আমেরিকা পাঠিয়ে দিয়েছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে কুয়েতের একটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সুপারভাইজার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে নিজেই প্রতিষ্ঠানটির একজন অংশীদার হয়ে ওঠেন এবং প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতে শুরু করেন। তিনি কুয়েতে এমন বেশ কিছু টেন্ডার কেনেন, যেগুলো লাভজনক ছিল না। সেগুলো কেনার উদ্দেশ্য ছিল, চুক্তিগুলোর আওতায় কুয়েতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী নেওয়া। ওই সংসদ সদস্য নিজে প্রায় সাত হাজার কর্মী নিয়ে যান সেখানে। এসব কর্মী নেওয়ার মাধ্যমে আয় করা অর্থ দিয়েই ওই টেন্ডারগুলোর অর্থায়ন করতেন তিনি। প্রতিশ্রুতির চেয়ে অনেক কম বেতন দিতেন কর্মীদের এবং পাঁচ মাস তাদের বেতন বাকি রাখেন।

গত বৃহস্পতিবার আরব টাইমসের অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কুয়েত সিআইডি সংশ্লিষ্ট তিন কম্পানির কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে গতকাল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ  বলেন, ‘পত্রপত্রিকার মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। কাল (রবিবার) অফিসে গিয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেব। ঘটনা সত্যি হলে, যত প্রভাবশালী হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

আপনার মতামত জানান