হেফাজতের ধ্বংসযজ্ঞ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়

প্রকাশিত



হেফাজতে ইসলামের হরতাল পালনকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে হরতাল সমর্থনকারীরা। ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে সরকারি, বেসরকারি অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান, দুটি মন্দির, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে। রক্ষা পায়নি পুলিশের কার্যালয়ও।

পুলিশ ও হেফাজত নেতাকর্মীদের মধ্যে রবিবার বেশ কিছু স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিকেল নাগাদ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অন্তত ২৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

তিন দিন ধরেই শহরজুড়ে তাণ্ডব চালানো হচ্ছে। শনিবার সদর থানায় দায়ের হওয়া পৃথক তিন মামলা সাড়ে ছয় হাজার অজ্ঞাত লোককে আসামি করা হয়।

হেফাজত নেতাকর্মীরা জেলা পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন, প্রেস ক্লাব, পৌর মিলনায়তন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, পুলিশ লাইনস, সদর থানা, খাঁটি হাতা বিশ্বরোড হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি, শ্রী শ্রী আনন্দময়ী কালী বাড়ি, দক্ষিণ কালী বাড়ি, রেলওয়ে স্টেশন, জেলা আওয়ামী লীগ ও সংসদ সদস্যের কার্যালয়, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারের কার্যালয়, তাঁর নিজের ও শ্বশুর বাড়ি, শহীদ ধীরেন্দ্র্রনাথ দত্ত স্মৃতি পাঠাগার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবন, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা চৌধুরী আফজাল হোসেন নেসারের বাড়ি, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আনার, জামাল খানের বাড়ি, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়ার কার্যালয়, মোকতাদির চৌধুরী মহিলা কলেজ, ছাত্রলীগ সভাপতি রুবেল হোসেনের বাড়ি, সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন শোভনের বাড়ি, চৌধুরী মঞ্জিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তাণ্ডব চালানো হয়। এ ছাড়া জেলার আশুগঞ্জ, সরাইলের একাধিক স্থানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।


হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি সম্পদ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি। তবে শেষ পর্যন্ত রক্ষা পায়নি মন্দির ও প্রেস ক্লাব। শহীদ ধীরন্দ্র নাথ দত্ত ভাষা চত্বরে শনিবার থেকে শুরু হওয়া উন্নয়ন মেলার স্টলও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ঢিল ছোড়া হয় চলন্ত সোনার বাংলা ট্রেনে।

আশপাশের ড্রেন থেকে কংক্রিটের স্লাব উঠিয়ে রেললাইনে এনে রাখা হলে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। স্টেশনের কাছের রেলগেটের ব্যারিয়ার বাঁকা করে ফেলা হয়। রেললাইন থেকে ক্লিপ খুলে ফেলা হয়। তালশহর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের মাঝখানে একটি সেতুতেও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পৌর এলাকার মূল সড়কের অনেক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে রাস্তা আটকে রাখা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবেও হামলা করে কাচ ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রেস ক্লাবের সভাপতি দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার রিয়াজউদ্দিন জামি প্রেস ক্লাবে ঢোকার সময় তার ওপর হামলা করা হয়। তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন। ছয়টি সেলাই লেগেছে।

আশুগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোল প্লাজায় থাকা পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ করে হরতাল সমর্থনকারীরা। এ সময় পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। টোল আদায়ের বুথ ভাঙচুর করা হয়। সরাইলের বিশ্বরোড এলাকায় পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির সাজিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, শনিবার সংসদ সদস্য মোকতাদির চৌধুরীর নেতৃত্বে মিছিল থেকে বিনাকারণে মাদরাসাছাত্রদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দেয়।

আপনার মতামত জানান