‘হারাম টাকা’ বলতে যা বোঝায়
সমাজে ‘হারাম টাকা’ বলে একটি পরিভাষা প্রচলিত আছে। যার মানে হলো, মহান আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ কোনো পন্থায় উপার্জিত টাকা। নিম্নে টাকা উপার্জনের এমন কিছু পন্থা তুলে ধরা হলো, যেসব পন্থায় টাকা উপার্জন করলে তা ‘হারাম টাকা’ বলে বিবেচিত হয়।
আত্মসাৎকৃত টাকা : মহান আল্লাহ কারো সম্পদ আত্মসাৎ করা নিষিদ্ধ করেছেন। যদি কারো উপার্জিত টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে হয়, তাহলে সেটা হারাম টাকা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে খিয়ানত করবে, কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে তা নিয়ে যা সে খিয়ানত করেছে। অতঃপর প্রত্যেক ব্যক্তিকে পুরোপুরি দেওয়া হবে যা সে উপার্জন করেছে এবং তাদের জুলুম করা হবে না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৬১)
অন্যায়ভাবে কারো টাকা হস্তগত করা : অনেকে আইনের ফাঁকে ফেলে অন্যের সম্পদ হাতিয়ে নেয়। কেউ আবার ছয়-নয় বুঝিয়ে অন্যের সম্পদ হস্তগত করে। আল্লাহর আইনে এগুলো নিষিদ্ধ। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের পরস্পরের অর্থ-সম্পদ অন্যায় অবৈধভাবে ভক্ষণ কোরো না। আর জেনে-বুঝে অপরাধমূলক পন্থায় অপরের সম্পদের কিছু অংশ ভক্ষণ করার উদ্দেশ্যে তা শাসকদের কাছে উপস্থাপন কোরো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)
ঘুষের টাকা : অবদুল্লাহ ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতাকে অভিসম্পাত করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫৮০)
সুদের টাকা : অর্থ উপার্জনের এই পদ্ধতিকে মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)
চুরি-ডাকাতির টাকা : চুরি-ডাকাতি অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জনের অন্যতম পদ্ধতি। যা মহান আল্লাহ হারাম করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘চোর পুরুষ ও চোর নারী—উভয়ের হাত কেটে দাও…।’ (আল মায়িদা, আয়াত : ৩৮)
এতিমের টাকা ভক্ষণ : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এতিমের সম্পদ ভোগ করার ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা অন্যায়ভাবে এতিমের অর্থ-সম্পদ ভক্ষণ করে তারা মূলত নিজেদের পেটে আগুন ভর্তি করে। অচিরেই তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০)
ওজনে কারচুপি করে বাড়তি আদায় করা টাকা : ওজনে কারচুপির কারণে মহান আল্লাহ পূর্ববর্তী একটি জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এতে বাহ্যিক লাভবান হলেও ধ্বংস নিশ্চিত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ওজনে কারচুপিকারীদের অভিসম্পাত করে বলেন, ‘ধ্বংস সেই ঠকবাজদের জন্য, যারা অন্য লোকদের কাছ থেকে গ্রহণ করার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে; কিন্তু তাদের ওজন বা পরিমাপ করে দেওয়ার সময় কম দিয়ে থাকে।’ (সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ১-৩)
সমাজবিধ্বংসী উপকরণ বা সেবা দিয়ে উপার্জন করা টাকা : যেসব ব্যবসা বা সেবা সমাজকে হারামে লিপ্ত করে, মানুষকে অশ্লীলতা ও হারামে লিপ্ত করে, সেসব ধরনের ব্যবসা/সেবার উপার্জন হারাম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা চায়, ঈমানদার লোকদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক, তাদের জন্য পৃথিবীর জীবনে এবং পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আছে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে, তাদেরই জন্য আছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ৬)
মাদক, জুয়া ইত্যাদির ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীরা, মদ, জুয়া আর মূর্তি ও ভাগ্য নির্ধারক তীর ঘৃর্ণিত শয়তানি কাজ, তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সাফল্যমণ্ডিত হতে পারো।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৯০)
আপনার মতামত জানান