হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হতে হলে মানতে হবে নতুন শর্ত
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় এ বছর রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকা কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারছে না। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীরা সামাজিকমাধ্যমে কোনো পোস্ট দিলে সেটিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।
চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০২১-২২) নতুন এ নির্দেশনা দিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। গত ১৮ মে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত এক ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে এ দুটি ছাড়া আরও কিছু শর্ত যুক্ত করা হয়েছে।
কওমিপন্থি আলেমদের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত দেশের বৃহৎ এ মাদ্রাসাটি।
সম্প্রতি নানা ইস্যুতে কওমি আলেমদের সঙ্গে সরকারের চলমান সংকট নিরসনে এবং সরকারের চাপের মুখে পড়ে হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রথমবারের মতো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তবে হাটহাজারী মাদ্রাসার ভর্তি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি সরাসরি স্বীকার করতে নারাজ। তারা বলছেন, এটি প্রথমবারের মতো নয়; কর্তৃপক্ষ বহু বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে এসব শর্ত চালু রেখেছে। মাদ্রাসার এসব কার্যক্রম মজলিসে এদারি (মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদ) ও মজলিসে ইলমির (মাদ্রাসা শিক্ষা পরিচালনা পরিষদ) সদস্যরা সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে পরিচালনা করে আসছে।
সূত্র জানায়, চলতি মাসের ৩০ মে থেকে সব বিভাগের নতুন ও পুরনো শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। এতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে প্রচলিত রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন এবং আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে কোনোরূপ সম্পৃক্ত থাকা যাবে না।
পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে ও ছাত্রাবাসসহ ক্যাম্পাসে মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো প্রকার স্মার্টফোন পাওয়া গেলে জব্দ করা হবে। তবে সাধারণ মোবাইল ফোন আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ব্যবহারের সুযোগ থাকবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাকমিল বিভাগের এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বায়নের এ যুগে বাংলাদেশ স্মার্টফোন ব্যবহার করতে না দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক সেটি জানি না। তবে এটি আমাদের কাছে স্পষ্ট যে, শুধু সরকারের চাপের কারণে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এ রকম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
এ ছাড়া শর্তের মধ্যে আরও রয়েছে— মাদ্রাসার ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক অবস্থান করতে হবে। শিক্ষার্থীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো পোস্ট দিতে পারবে না; দিলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। তা ছাড়া শরিয়া পরিপন্থী কোনো কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া যাবে না। আচার-আচরণ, চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ তালিবুল ইলমের মানসম্পন্ন হতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সদস্য মাওলানা ইয়াহইয়া সাংবাদিকদের বলেন, এ দেশের বেশিরভাগ কওমি মাদ্রাসা ভারতের দেওবন্দের আকিদা অনুসরণ করে। বহু বছর ধরে দেওবন্দের অনুসরণ করে হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কওমি আকিদার সক্রিয়তা বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ভর্তি কার্যক্রমসহ যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, কওমি আলেমদের রাজনৈতিক কোনো অভিলাষ নেই। তাদের রাজনৈতিক কোনো অভিযোগ নেই, রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই, তারা তাদের শিক্ষার্থীদের কখনও রাজনৈতিক অভিলাষ তথা-রাজনীতি করার জন্য উৎসাহ বা উদ্দীপনা জোগায় না। আর এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আমাদের মাদ্রাসায় রাজনৈতিক বা কোনো অরাজৈনতিক সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো শিক্ষার্থীকে এ মাদ্রাসায় ভর্তির অনুমতি দিয়ে থাকি না।
আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী (হাটহাজারী মাদ্রাসা) উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও সুবিখ্যাত একটি ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এর আয়তন ৪.৪৩ একর বা ১৭ হাজার ৯২৭ বর্গমিটার।
বর্তমানে মাদ্রাসটির শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ১০০ জন এবং ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। সূত্রঃ যুগান্তর।
আপনার মতামত জানান