স্লুইসগেটের সংযোগ সড়কে ভাঙন: দুশ্চিন্তায় কৃষক

প্রকাশিত

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে গত বছরের বন্যায় ভেঙে যাওয়া কৈয়ার ঢালা স্লুইসগেটের সংযোগ সড়কটি এখনো মেরামত করা হয়নি। দীর্ঘ আট মাস পার হলেও সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় তিন উপজেলার কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তাদের আশঙ্কা, দ্রুত সংস্কার করা না হলে আগাম বৃষ্টিপাতে কুশিয়ারা নদীর পানি ঢুকে হাওরের হাজারো হেক্টর বোরো ফসল ডুবে যেতে পারে।

সরেজমিনে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ৪ জুন আজমিরীগঞ্জ-বদলপুর সড়কের কুশিয়ারা তীরবর্তী কৈয়ার ঢালা স্লুইসগেটের সংযোগ সড়কের দুই পাশে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। শুরুতে ছোট আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পানির স্রোতে ধীরে ধীরে ভাঙনের মাত্রা বাড়তে থাকে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, হাওরের বোরো ধানই তাদের প্রধান ফসল। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা মারাত্মক লোকসানের মুখে পড়বেন। আর মাত্র দেড় মাস পরই ধান কাটার মৌসুম শুরু হবে, কিন্তু তার আগেই বাঁধটি মেরামত করা না হলে অকাল বন্যায় পুরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে এই ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকলে শুধু আজমিরীগঞ্জ নয়, বানিয়াচং ও নবীগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ হাওরের ফসলও তলিয়ে যাবে। এতে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। আজমিরীগঞ্জের জলসুখা গ্রামের কৃষক আশিক মিয়া বলেন, ‘আমাদের বোরো ধান ছাড়া আর কোনো ফসল নেই। গত বছর এই স্লুইসগেটটি ভেঙেছে, কিন্তু এখনো মেরামত করা হয়নি। যদি আগামী এক মাসের মধ্যে সংস্কার না করা হয়, তাহলে চৈত্র মাসের শুরুতে কুশিয়ারা নদীতে যে পানি আসে, তাতেই হাওর ডুবে যাবে।’

কৃষক ইউসূফ আলী বলেন, ‘এই স্লুইসগেট কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। এটি যদি মেরামত করা না হয়, তাহলে শুধু আজমিরীগঞ্জের কৃষকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, বানিয়াচং ও নবীগঞ্জের হাজার হাজার হেক্টর ফসলও তলিয়ে যাবে। আমাদের ফসল রক্ষায় দ্রুত এটি মেরামত করা দরকার।’

সবুজ মিয়া বলেন, ‘কার কাছে গেলে এই বাঁধটা দ্রুত মেরামত করা হবে, বুঝতে পারছি না। কেউ কোনো খোঁজ-খবর নেয় না। কয়েকদিন পরই বৃষ্টি শুরু হবে। তখন কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়লে আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।’

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২২ সালের বন্যাতেও এই স্লুইসগেটে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। তখন নদী থেকে বালু তুলে ত্রুটিপূর্ণভাবে বাঁধ মেরামত করা হয়েছিল। ফলে গত বছরের বন্যায় এটি আবারও ভেঙে যায়।

আজমিরীগঞ্জ-বদলপুর সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন। সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভাঙা অংশটি মেরামতের জন্য গত সপ্তাহে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। তাকে দ্রুত কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগের সংস্কারকাজ কেমন হয়েছিল, সে বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে এবার বাঁধটি আরও শক্তিশালীভাবে নির্মাণ করা হবে। ঠিকাদারকে এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

আপনার মতামত জানান