স্বপ্ন থেকে শিখরে বাংলাদেশ

প্রকাশিত

বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের তোলা ৩২১ রান বাংলাদেশ পেরিয়ে যায় ৫১ বল হাতে রেখে। সাকিব করেছেন ১২৪ রান, লিটন ৯৪। চতুর্থ উইকেটে দুজনের ছিল ১৮৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি।

দূর্দান্ত জয়। ৩২২ রানের লক্ষ্য। এ বিশ্বকাপে কোনো দল আড়াই শ তাড়া করে জেতেনি এখনো। তিন শ ছাড়ানো স্কোর মানেই জয়ের নিশ্চয়তা। সে ম্যাচে বাংলাদেশের ৪০তম ওভার যখন শেষ হলো, তখন স্কোরবোর্ডে লেখা ৩০৫! ৬০ বলে ১৭ রান দরকার বাংলাদেশের। সেটা ৫১ বল হাতে রেখেই কাজ সারল বাংলাদেশ।

নবম ওভারে যখন নেমেছিলেন বাংলাদেশের স্কোরটা তখন ভালোই। ৫০ বলে ৫২ রানের উদ্বোধনী জুটিকে যেকোনো বিচারেই ভালো বলতে হবে। তবে সে ভালোটাকে আরও ভালো করার দায়িত্ব নিয়েছেন সাকিব। গত কিছুদিনের খোলসবন্দী তামিম আজ বল্গা হরিণের মতো না হলেও ছুটছিলেন। কিন্তু সে তামিমকেও ম্লান দেখাচ্ছিল সাকিবের কাছে। বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচেই ফিফটি ছাড়িয়েছেন। সর্বশেষ ম্যাচে সেটা সেঞ্চুরির কোটাও পেরিয়েছে।

নবম ওভারে নেমেছিলেন, ২১তম ওভার শুরু হতেই পেয়ে গেলেন ফিফটি। শিমরন হেটমায়ারের মতো ছক্কা মেরে বল হারাতে যাননি। ঠিক যতটা দরকার, ততটা করেছেন। আর তাতেই ৪০ বলে ফিফটি হয়ে গেল তার। ৭টি চার তার মাঝে।

এর মধ্যেই অবশ্য বাংলাদেশের ইনিংসে একটা ঝড় বয়ে গেছে। ১০ বল ও ১২ রানের মধ্যে বাজেভাবে বিদায় নিয়েছেন তামিম (৪৮) ও মুশফিক (১)। ৩ উইকেটে ১৩৩ রান বাংলাদেশের।

বাংলাদেশকে গতিতে উড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল উইন্ডিজদের। তা বাউন্সার দিতে কোনো কার্পণ্য করেননি তাঁরা, কিন্তু হুক, পুল বা কাট করতে সাকিবও তো কখনো আলস্য দেখাননি। উইন্ডিজ ফিল্ডারদের চোখের সামনে দিয়ে বল সীমানা পেরোতে লাগল, হা হুতাশ বাড়তে বাড়তে পরাজিত এক দলের দেখা মিলল ইনিংসের মাঝপথেই। ফিফটিটা সেঞ্চুরি হলো। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড এক ইনিংস পরেই ১২ বল কমিয়ে আনলেন সাকিব। ততক্ষণে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়ে গেছে।

সাকিব গত ম্যাচেও এভাবে বোলারদের শাসন করেছিলেন। কিন্তু ইংল্যান্ড ম্যাচে বড্ড একা পড়ে গিয়েছিলেন। আজ আর তাঁকে একা লড়তে হয়নি। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে প্রথম দুই তিনটি বলে একটু অস্বস্তি দেখা গিয়েছিলে। দুই তিনবার ব্যাটের কানা লেগে বল যে পেছন দিয়ে চার হয়েছে তাতেও লিটনের কোনো অবদান ছিল না। কিন্তু সে সব শটেই আত্মবিশ্বাস এসেছে। আর সে আত্মবিশ্বাসের ফলটা টের পেলেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। ৩৮তম ওভারের প্রথম তিন বল সীমানার এপারে পোড়তে দেননি লিটন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম ছক্কার হ্যাটট্রিকের রেকর্ডটা লিটন বুঝে নিলেন কী অবলীলায়! কী অনায়াসে!

দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাকিবের চেয়ে আগ্রাসী ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের ক্রিকেটেই কম এসেছে। তবু ফিফটি পেরিয়ে যাওয়া সাকিবকেই একটু পরে দ্রুত রান তোলায় টপকে গেলেন লিটন। ১৩৫ বলে ১৮৯ রানের চতুর্থ উইকেট জুটিতে সাকিবের অবদান ৮০। আর সাকিবের চেয়ে মাত্র ৩ বল বেশি খেলা লিটনের অবদান ৯৪। একটাই অতৃপ্তি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান একটু কম হয়ে যাওয়ায় সেঞ্চুরিটা পেলেন না লিটন।

প্রতিপক্ষ ৩২২ রান করার পরও লেখা যাচ্ছে, ‘রানটা একটু কম হয়ে যাওয়ায়।’ না, এমন দাপুটে জয় আসলেই দেখেনি বাংলাদেশ।

আপনার মতামত জানান