সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ্’র সমাধী

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, সোনারগাঁ :
শাহচিল্লাপুর। নারায়ণগঞ্জ জেলাধীন সোনারগাঁ উপজেলার একটি গ্রাম। সবুজ শ্যামলীমার মাঝে গড়ে ওঠা ঐতিহাসিক এ গ্রামটি সবার কাছে পরিচিত না হলেও যাদের আগ্রহ ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে, তাদের কাছে নামটি অতি পরিচিত। সবার আকর্ষণ বাংলার শেষ স্বাধীন সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ্। প্রথম ইলিয়াছ শাহী বংশের এ সুলতানের অপরুপ কারুকার্য খচিত সমাধি পরিদর্শনে সারা বছরই পর্যটকরা এ গ্রামে ভিড় করেন। সমাধিটি কালো কষ্টিপাথরে নির্মিত হওয়ায় এলাকায় ‘কালা দরগাহ্’ নামে বিশেষভাবে পরিচিত।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলার প্রথম ইলিয়াছ শাহী বংশের তৃতীয় সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ্। বিস্তৃতির চেয়ে রাজ্যকে সুদৃঢ় করার দিকে বেশী মনোযোগী ছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা ও সুশাসনের জন্য রেখেছেন গৌরবোজ্জল অবদান। আইনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল সুলতান বিদ্বান লোকদের সান্নিধ্যে থাকতেন ও তাদের সমাদর করতেন। সমকালীন চৈনিক স¤্রাট ইয়ং লি’র সাথে তার সুসম্পর্ক ছিলো। তিনি চীন, মক্কা ও মদিনায় দূত প্রেরণ করেন। মক্কা ও মদিনায় ‘গিয়াসিয়া মাদ্রাসা’ নামক দু’টি মাদ্রাসা নিমানে তিনি আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। সাহিত্য প্রেমী সুলতান আরবি ও ফারসি ভাষায় কবিতাও লিখতেন। পারস্যের বিখ্যাত কবি হাফিজের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ ছিল। কবি হাফিজকে বাংলায় নিমন্ত্রণ করেন। জবাবে কবি সুলতানকে একটি গজল লিখে পাঠিয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যের উন্নতির ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অবদান ছিল এ সুলতানের।
গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ্ তাঁর পিতা-সুলতান সিকান্দার শাহ্ ও পিতামহ-সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াছ শাহী’র মতোই আলেম ও সুফিদের ভক্তি-শ্রদ্ধা করতেন। তাঁর সমসাময়িকদের মধ্যে শেখ আলাউল হক ও নূর কুতুব আলম খুব বিখ্যাত ছিলেন। তাঁর শাসনামলেই প্রথম বাঙালী মুসলমান কবি শাহ মুহম্মদ সগীর ‘ইউছুফ-জুলেখা’ কাব্য রচনা করেন। এ ছাড়া পবিত্র মক্কা ও মদিনার তীর্থযাত্রীদের সহায়তা করতেন সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ্। বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য বিশেষ ভাবে পরিচিত ছিলেন তিনি। ১৪১১ সালে সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ্ মৃত্যু বরণ করলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের শাহচিল্লাপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুলতান গিয়াস উদ্দিনের সমাধির পাশে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের একটি সাইনবোর্ডে লেখা আছে,‘কোনো ব্যক্তি এ পুরাকীর্তির কোনো রকম ধ্বংস, বিকৃতি, পরিবর্তন বা ক্ষতি করলে পুরাকীর্তি আইন ১৯৭৬-এর ১৯ ধারা অনুযায়ী এক বছর পর্যন্ত জেল বা জড়িমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।’
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ১৯২০ সালের ২২ নভেম্বর গিয়াসউদ্দিনের সমাধিকে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের পূরাকীর্তির তালিকায় অর্šÍভুক্ত করে সরকার। সমাধিটি কষ্টিপাথরে নির্মিত। এটি ১০ ফুট লম্বা , ৫ ফুট চওড়া ও ৩ ফুট উঁচু। সমাধির ৩ ফুট উচ্চতার খিলানের ওপর আরও দেড় ফুট উচ্চতায় ৭ ফুট লম্বা অর্ধাবৃত্তাকার কষ্টি পাথরে ঢাকা। মূল সমাধির কার্নিশে রয়েছে সুক্ষ্ম কারুকাজ খচিত অলংকার। দুই পাশে রয়েছে তিনটি করে তিন খাঁজবিশিষ্ট খিলান। খাঁজের মধ্যে রয়েছে প্রলম্বিত শিকল ও ঝুলন্ত ঘন্টার নকঁশা।
আপনার মতামত জানান