শোক দিবসেও বিভক্ত সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত



উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি ঠেকাতে সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগ ঐক্যের ডাক দিয়ে একমঞ্চে দাঁড়ালেও জাতির জনকের ৪৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালনে ঐক্যে আসতে পারেনি সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভক্ত নেতাকর্মীরা। তিনভাগে বিভক্ত হয়ে তারা জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে। এ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করা প্রবীন ও তৃণমূল নেতাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়। এটা সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি, সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মাহফুফুজুর রহমান কালাম ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার নেতৃত্বে উপজেলার ৯ টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় গণভোজের আয়োজন করা হয়। সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ চত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন পুস্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে ১৫ আগষ্টে শাহাদাৎ বরণকারি সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন করলেও বিপরীত দৃশ্য পরিলক্ষিত হয় আহ্বায়ক কমিটি প্রতিহত করার ঘোষনা দেওয়া আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের নেতাকর্মীদের মধ্যে। তারা আলাদা আলাদাভাবে শোক দিবস পালন করেন।

জানা যায়, সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সারের নেতৃত্বে তাঁর সর্মথীত নেতাকর্মীরা সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ চত্বরের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পূস্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের নেতৃত্বে তাঁর সর্মথিত নেতাকর্মীরা বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কার্যে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়াও তাঁরা আলাদাভাবেই গণভোজের আয়োজন করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতির জনকের শাহাদাৎ বার্ষিকী ও শোক দিবসে উপজেলা আওয়ামী লীগের সকলে একমঞ্চে দাঁড়িয়ে শোক পালন করাই হতো সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত। তারা আরো জানান, অন্তত আহ্বায়ক কমিটি প্রতিহত করার ঘোষণা যারা দিয়েছেন তাদের একমঞ্চে থাকা ছিল খুবই জরুরি। শোক দিবসের আজকের দিনে এ বিভাজন বলে দেয় তাঁরা মুখে মুখে ঐক্যের ডাক দিলেও অন্তরে বিভক্তিস্পষ্ট।

আওয়ামী লীগের প্রবীন রাজনীতিবিদ এ প্রতিবেদককে জানান, যারা বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকীতে এক হতে পারে না, তাঁরা কিসের আওয়ামী লীগ করে। তাদের মাঝে যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ছিটেফোঁটাও থাকত তাহলে আজকের দিনের জন্য হলেও সব দ্বীধাদন্ধ ভুলে একমঞ্চে দাঁড়াতে পারত। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি নয় ব্যক্তিস্বার্থে রাজনীতি করে।

দলীয় সুত্রে জানা যায়, সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সারের সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের বিভক্তি ও মতানৈক্য চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াকে আহবায়ক ও ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৮ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন জেলা আওয়ামী লীগ। এ আহ্বায়ক কমিটি প্রতিহত করতে দীর্ঘদিনের শত্রুতা ভুলে গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় কায়সারের নেতৃত্বে একমঞ্চে চলে আসেন মাহফুজুর রহমান কালাম, মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন, আরিফ মাসুদ বাবু ও এএইচএম মাসুদ দুলাল সমর্থিত নেতাকর্মীরা। মঞ্চ থেকে আহ্বায়ক কমিটিকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করে তা প্রতিহত করার শপথ গ্রহন করেন নেতাকর্মীরা। তার কিছুদিন পরেই আবার তাদের মাঝে অনৈক্য দেখা যায়। শোকদিবসের প্রস্তুতি সভায় আবারো সবাইকে একেমঞ্চে দেখা গেলেও শোকদিবস পালনে দেখা ভিন্ন চিত্র। ঐক্য এবং ভাঙ্গন নিয়ে তাঁরা ব্যস্ত থাকলেও হাটি হাটি করে এগিয়ে যাচ্ছে আহ্বায়ক কমিটি। তারা তাদের নেতৃত্বে সোনারগাঁয়ের ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় কমিটি করার ঘোষনা দিয়েছেন শোকদিবসের প্রস্তুতি সভায়। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা নানা দ্বিধাদন্ধে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। তারা আছেন উভয় সংকটে। তবুও শেষ পর্যন্ত কি হয় তা দেখার অপেক্ষায় আছেন। একজন তৃণমূল কর্মী এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়?

আপনার মতামত জানান