শরীরে ক্যালসিয়ামের গুরুত্ব
শরীর গঠনে ক্যালসিয়ামের গুরুত্ব অনেক। এই প্রয়োজনীয় উপাদানটি হাড় ও দাঁত মজবুত করতেও জরুরি। শুধু কি তাই? কেটে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতেও তা সহায়ক। এটি শরীরের বিকাশ, মাংসপেশি গঠন, হৃদ্যন্ত্রের মাংসপেশির সংকোচন-প্রসারণ, স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন সংকেত আদান-প্রদান ছাড়া বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টটি খাবারে যথেষ্ট মাত্রায় থাকলে নারীদের রজঃনিবৃতির পর হাড় ক্ষয় নামের অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধসহ হাইপারটেনশন ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা ১০০০ মিলিগ্রাম। আবার পোস্ট মেনোপোজাল নারীদের ক্ষেত্রে ও সত্তরোর্ধ্ব মানুষের ক্ষেত্রে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২০০ থেকে ১৫০০ মিলিগ্রাম।
আমাদের দেশে বিশালসংখ্যক মানুষ ক্যালসিয়ামের এই চাহিদা পূরণ করতে পারে না। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এই খনিজ পদার্থের ঘাটতি দেখা দিলে হাইক্যালসিমিক টিটেনিসহ নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়ে।
কখন ঘাটতি হয়?
সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা বাড়ে। বিশেষ করে নারীদের রজঃবৃত্তির পর হাড়ে সঞ্চিত ক্যালসিয়াম কমে গিয়ে হাড় পাতলা ও ভঙ্গুর হয়।
খাবারে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কম থাকা, অপুষ্টিতে ভোগা, হরমোনজনিত সমস্যা, বিশেষ করে ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব, ক্যালসিয়াম শোষিত না হওয়া—অর্থাৎ খাবারে যথাযথ ভিটামিন ও খনিজ থাকা সত্ত্বেও শরীর কর্তৃক শোষণে ব্যর্থ হওয়া। অনেক সময় কিডনি সমস্যাজনিত কারণেও ক্যালসিয়াম কমে যায়।
ক্যালসিয়াম ঘাটতিজনিত কারণে যেসব
সমস্যা হয় তা হলো—
স্নায়বিক সমস্যা
ক্যালসিয়ামের অভাবে নানা ধরনের স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়। যেমন—হাত-পায়ের আঙুল ও মুখের চারপাশের মাংসপেশি ঝিমঝিম করা, কারপাল স্পাজম—অর্থাৎ রোগীর প্রেসার মাপার সময় হঠাৎ হাত বাঁকা হয়ে যাওয়া ছাড়াও হাইপোক্যালসেমিক টিটেমি নামের মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পেশি সংকোচন
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক থাকা ও পর্যাপ্ত পানি পান করার পরও যদি নিয়মিত মাংসপেশি সংকুচিত হয়—অর্থাৎ খিঁচুনি ধরে, তবে বুঝতে হবে যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি আছে।
হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের সঞ্চিত ক্যালসিয়াম কমে যেতে থাকে। ফলে হাড়ে ক্যালসিয়ামের ঘনত্ব কমে যায়। অস্টিওপরোসিস বা হাড়ে ছোট ছোট ছিদ্র হয়ে যায়। হাড় ভঙ্গুরতার কারণেই এসব হয়।
দৃঢ়তাহীন নখ
নখ শক্ত হওয়া বা দৃঢ়তা বৃদ্ধিতে ক্যালসিয়াম অত্যাবশ্যকীয়। যদি ক্যালসিয়াম কম হয় তবে নখ নরম, ভঙ্গুর ও দৃঢ়তাহীন হবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম
ক্যালসিয়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর ঘাটতি হলে জীবাণু বা প্যাথোজেন মোকাবেলা করার শক্তি কমে যায়।
অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন
ক্যালসিয়াম হৃৎপিণ্ডের সঠিক কার্য চালনার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। এটি কম হলে হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে যায়। ক্যালসিয়াম হৃৎপিণ্ডকে রক্ত পাম্প করতে সহায়তা করে।
করণীয়
যদি লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। তখন তিনি রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে ব্যবস্থাপত্র দেবেন। ক্যালসিয়ামের অভাব মোকাবেলায় নিয়মিত ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার অথবা পুষ্টিকর সাপ্লিমেন্ট খাওয়া জরুরি।
মনে রাখা দরকার, ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে ভালো উৎস হচ্ছে গরু বা ছাগলের দুধ। এক কাপ দুধে (২৩৭ মিলি) ২৭৬-৩৫২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এ ছাড়া সবুজ শাকসবজি, দই, বাদাম, পনির ইত্যাদিতেও প্রচুর ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। তাই এই খাবারগুলোকে প্রাধান্য দিন।
তথ্যসুত্র : দৈনিক কালের কন্ঠ
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ
এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতাল, দিনাজপুর
আপনার মতামত জানান