লোকজ ঐতিহ্যের মেলায় টেপা পুতুল
বিশেষ প্রতিনিধি (ডেইলি সোনারগাঁ) >>
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের লোকজ মেলায় ৬৪ জন কারুশিল্পীর প্রদর্শনী চলছে। ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার সংস্কৃতিমন্ত্রী কে এম খালেদ এ মেলার উদ্বোধন করেন। তিনি লোকজ মেলার প্রদর্শনী ঘুরে ঘুরে দেখে শিল্পীদের তৈরি কারুশিল্পের প্রশংসা করে বলেন এখান থেকে শিল্প সংগ্রহ করে ময়মনসিংহের জয়নুল সংগ্রহ শালাকে আরো সমৃদ্ধ করা হবে।
কারুশিল্প প্রদর্শনীতে চোখে পড়ে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ চরপাড়া থেকে আসা আরতী রানীর টেপা পুতুল। তিনি বংশানুক্রমে টেপা পুতুল শিল্পের সাথে জড়িত। এক সময় মা-ঠাকুমার সাথে শখের বমে পুতুল তৈরি করলেও পরে এ শিল্পের সাথে জড়িয়ে যান। দীর্ঘপ্রায় ৫০ বছর যাবত পুতুল তৈরি করলেও কোন পুরস্কার বা সম্মাননা পাননি বলে জানান। তিনি আরও জানান এ শিল্পের সাথে জড়িত শিল্পীরা আর্থিক অনটনের কারনে এ শিল্প থেকে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। দেশে এ মূহুর্তে যে দু’একটি পরিবার রয়েছে আরতী রানী তাদের একজন। তাদের পরে টেপা পুতুলের এ ঐতিহ্য ধরে রাখার মতো পরিবারে আর কেউ নেই।
জানা যায়, মাটি দিয়ে কুমোরর তৈরি একটি উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম হলো টেপা পুতুল। বাংলার কুমোররা নরম এঁটেল মাটি দিয়ে হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞানের মাধ্যমে টিপে টিপে এই পুতুল তৈরি করে। হাত দিয়ে টিপে তৈরি করে বলে এ পুতুলকে টেপা পুতুল বলে। টেপা পুতুল বাংলার ঐতিহ্যেরও একটি অংশ। কবে, কোথায় এ পুতুল বানানো শুরু হয়েছে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে মূলত মেয়েরাই টেপা পুতুল তৈরি করে। তবে বর্তমানে পুরুষরাও এ কাজে জড়িত হচ্ছে। এ পুতুল বানাতে কারিগরকে নিজস্ব মেধা ও দক্ষতা প্রয়োগ করতে হয়। পুতুলের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হাতের সাহায্যেই গড়ে তোলা হয়।
মাটির বুটি দিয়ে বা কাঠির রেখা টেনে এ পুতুলের অলংকার ও পোশাকের আভাস ফুটিয়ে তোলা হয়। পরে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়। শুকানো হয়ে গেলে পোড়ানো হয় আগুনে। এভাবেই টেপা পুতুল বানানো হয়। সাধারণত বাচ্চাদের খেলনাসামগ্রী হিসেবে টেপা পুতুল বানানো হয়। উল্লেখযোগ্য কিছু খেলনা পুতুল হলো বউ-জামাই, কৃষক, নথ পরা বউ। শৌখিন ব্যক্তিরা গৃহসজ্জার জন্য এ পুতুল সাজিয়ে রাখেন। গ্রামবাংলার মেলায় টেপা পুতুলের পসরা সাজানো থাকে। বর্তমানে শহুরে মেলায়ও এ পুতুল দেখা যায়।
আপনার মতামত জানান