রোগীদের ভোগান্তিতে ফেলে শিক্ষানবিশদের ধর্মঘট!
গুরুতর অসুস্থ রোগীরা দীর্ঘক্ষণ দুপুরের খাবার না-পেয়ে ছটফট করলেন। অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীকে ওটিতে নিয়ে যাওয়ার লোক জুটল না। লিফ্ট আছে কিন্তু চালকের অভাবে তা বন্ধ। দেখা মিলল না ট্রলি চালানোর লোকেরও। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে রবিবার দিনভর এটাই ছিল স্বাস্থ্য-সেবার চিত্র। কারণ, তিন দফা দাবিতে ইন্টার্ন ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন ধর্মঘট করেছেন। তাদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির রবিবার দ্বিতীয় দিন। দিনভর শিক্ষানবিশদের হাসপাতালে দেখা মেলেনি।
রোগীদের এমন চরম দুর্ভোগ দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্বজনরা। হাসপাতালের মতো জরুরি সেবার জায়গায় কীভাবে এমন আন্দোলন চলতে পারে। তাছাড়া আন্দোলনের ডাক দিয়েছে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা। কিন্তু হাসপাতালের পরিবেশ বলছে গোটা কর্মচারীরাই আন্দোলনে একাত্বতা প্রকাশ করেছে, সেই প্রশ্ন উঠেছে সব মহলে। সেই প্রশ্নের সহজ উত্তর খুঁজে পাওয়া গেছে। আর সেটি হচ্ছে, রোগীদের ভোগান্তিতে ফেলে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের ‘সফল’ ধর্মঘট পালন।
তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, এক হাজার শষ্যার এতবড় হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ কি ইন্টার্ন ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন হাতে? সেটিও চমৎকার উত্তর মিলেছে স্বয়ং হাসপাতালের পরিচালকের বক্তব্যে। শেবাচিম হাসপাতালে পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলছেন, ২২৪টি পদের বিপরীতে মাত্র ৯১ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। হাসপাতালে ১৫০০ রোগী চিকিৎসাধীন। শূন্যপদ পূরণের উদ্যোগ কার্যকর না হওয়ায় শিক্ষানবিশ শতাধিক চিকিৎসকদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। কাজের তাগিদেই তাদের সঙ্গে হাসপাতলের স্টাফদের সম্পর্কটা বেশ ভালো।
শিক্ষনবিশ চিকিৎসকদের সংগঠনের সভাপতি ডা. সজল পান্ডে বলেন, তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে আমরা ধর্মঘট পালন করে আসছি। হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে আমাদের ধর্মঘটের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে জেষ্ঠ চিকিৎসকরা দাপ্তরিক কাজে ব্যস্থ থাকেন। হাসপাতালের পুরো দায়িত্ব আমরাই পালন করি। এই কারণে হাসপাতালের স্টাফদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা অন্যরকম। তারা যদি আমদের দাবির প্রতি মৌন সমর্থন দেয়, তাতে আমার কী করার আছে। আমরা স্টাফদের কাজে যোগদানের জন্য নিশেধ করিনি। কেউ আমাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিলে আমদের কী করার আছে।
রোগী ও রোগীর স্বজনরা জানান, শনিবার দুপুরের পর থেকে কোনো চিকিৎসকরা তাদের খোঁজ খবর নেয়নি। এমনকি কোনো চিকিৎসকের দেখাও তারা পাননি। এ অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। বিশেষ করে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সাধারণত ২৪ ঘণ্টাই রোগীর পাশে থাকতো। কিন্তু কর্মবিরতির কারণে এখন আর তারা কেউ সেখানে নেই। পরিসংখ্যান বলছে, ধর্মঘট শুরুর ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৯ রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। যা আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ১০ জন।
উল্লেখ্য, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসকরা শনিবার দুপুর দুইটা থেকে টানা ধর্মঘট শুরু করে। ইন্টার্ন চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সজল পান্ডে ও সাধারণ সম্পাদক ডা. তরিকুল ইসলামসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারসহ তিনদফা দাবিতে এ ধর্মঘট শুরু করেছেন তারা।
আপনার মতামত জানান