রাসুল (সা.) রমজানে অধিক তিলাওয়াত করতেন
রমজান কোরআন নাজিলের মাস। সর্বোচ্চ মর্যাদাবান এই কিতাবের কারণেই মাস মহিমান্বিত। বরকতময় এই মাসে ৩০ রোজা পালনের পাশাপাশি রোজাদারের কাছে রমজান-ইবাদতের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে কোরআন তিলাওয়াত ও তারাবির খতমে কোরআন। তাই লকডাউনের অবসরে রমজানজুড়ে ঘরে ঘরে হতে পারে কোরআন তিলাওয়াত ও প্রশিক্ষণের চর্চা। বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শেখার ক্ষেত্রে এ সময় সরাসরি কোনো মাধ্যম না পেলে অনলাইনকেন্দ্রিক কোরআনের বিভিন্ন সাইট থেকেও সহযোগিতা নিতে পারি আমরা। একটু ইচ্ছা করলে বেশ কিছু সহজ আয়াত ও ছোট সুরাও মুখস্থ করা যেতে পারে ঘরবন্দি এই অবসরে। এখানে কোরআনের তিলাওয়াত, শিক্ষা, আলোচনা ও আমল করার গুরুত্ব ও ফজিলত তুলে ধরছি।
রাসুল (সা.) রমজানে অধিক তিলাওয়াত করতেন : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রমজান মাসের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হতেন এবং তাঁরা উভয়েই পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করে একে অপরকে শোনাতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬)
তিলাওয়াতকারীর সওয়াবের পরিমাণ : তিলাওয়াতকারী প্রতি অক্ষরে ১০ নেকি পায়। রমজানের বরকতে এই নেকি দ্বিগুণ, বহুগুণও বেড়ে যেতে পারে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি অক্ষর তিলাওয়াত করল তার বিনিময়ে সে একটি নেকি পাবে, আর একটি নেকির বিনিময় হবে ১০ গুণ। এ কথা বলছি না যে আলিফ-লাম-মিম একটি অক্ষর, বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মিম একটি অক্ষর।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৯১০)
বিশুদ্ধ তেলাওয়াতের চেষ্টাকারীর সওয়াব দ্বিগুণ : যারা শুদ্ধ কোরআন পড়তে জানে না, তারা তিলাওয়াতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। শুদ্ধ করার পাশাপাশি ঠেকে ঠেকে হলেও তিলাওয়াত চালিয়ে যাওয়া উচিত। এতেও দ্বিগুণ সওয়াবের কথা হাদিসে এসেছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোরআন তিলাওয়াতে পারদর্শী ব্যক্তিরা সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গে থাকবে। আর যারা ঠেকে ঠেকে কষ্ট করে কোরআন তিলাওয়াত করে তারা দ্বিগুণ সওয়াব পাবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮৯৮)
রাতে যত বেশি তিলাওয়াতে তত বেশি মর্যাদা : রাত্রিকালীন নফল ইবাদত আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়। তাই আল্লাহ তাআলা রাতে কোরআন তিলাওয়াতের আয়াতসংখ্যার পরিমাণ অনুযায়ী তিলাওয়াতকারীর মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে ১০টি আয়াত তিলাওয়াত করে সে গাফেল বলে গণ্য হবে না, আর যে ব্যক্তি ১০০ আয়াত তিলাওয়াত করে সে আনুগত্যশীল বলে গণ্য হবে, আর যে ব্যক্তি এক হাজার আয়াত তিলাওয়াত করে তার জন্য সওয়াবের ভাণ্ডার লেখা হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪০০)
কোরআনের তিলাওয়াতকারী আল্লাহর পরিজন : আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিছু লোক আল্লাহর পরিজন। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তারা কারা? তিনি বলেন, কোরআন তিলাওয়াতকারীরা আল্লাহর পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫)
সন্তানকে কোরআন শিক্ষা দেওয়ার ফজিলত : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে এবং তদনুযায়ী আমল করে, কিয়ামতের দিন তার পিতা-মাতাকে এমন মুকুট পরানো হবে, যার আলো সূর্যের আলোর চেয়েও উজ্জ্বল হবে। ধরে নাও, যদি সূর্য তোমাদের ঘরে বিদ্যমান থাকে (তাহলে তার আলো কিরূপ হবে?)। তাহলে যে ব্যক্তি কোরআন অনুযায়ী আমল করে তার ব্যাপারটি কেমন হবে, তোমরা ধারণা করো তো! (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৫৩)
সুত্রঃ কালেরকন্ঠ
আপনার মতামত জানান