যেসব উপার্জন মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়

প্রকাশিত

কিছু পথ এমন আছে, যেগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ হলেও মানুষের ধারণা এসব পথে মানুুষের রিজিক বৃদ্ধি পায়। সম্পদ ও প্রাচুর্য আসে। অথচ এসব বিষয় মানুষের রিজিকের বরকত উঠিয়ে নেয়। মানুষের দুনিয়া-আখিরাত ধ্বংস করে দেয়। নিম্নে এমন কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো—

সুদ লেনদেনকারীর ওপর অভিশাপ : মানবতাকে ধ্বংস করার হাতিয়ার এই সুদ। সুদখোর সর্বাবস্থায় আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থায় থাকে। এটি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দৃষ্টিতে অত্যন্ত জঘন্য একটি অপরাধ। রাসুল (সা.) সুদখোর, সুদদাতা ও সুদের সাক্ষীকে অভিশাপ দিয়েছেন এবং বলেছেন, তারা সবাই সমান অপরাধী। (মুসলিম) তিনি বিদায় হজের ভাষণে সব ধরনের সুদকে নিষিদ্ধ করেছেন। (বুখারি)

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সুদকে হ্রাস করেন এবং সদকাকে বর্ধিত করেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৬)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, সুদ সম্পদের বরকত নষ্ট করে দেয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে জাতির মধ্যে সুদ প্রসারিত হয়, তারা অবশ্যই দুর্ভিক্ষে নিপতিত হয়। (মুসনাদে আহমাদ)

এই দুর্ভিক্ষ অনেক ধরনেরই হতে পারে; যেমন—আগে দুর্ভিক্ষ ছিল খাবারের অভাব আর এখন দুর্ভিক্ষ হচ্ছে নির্ভেজাল খাবারের অভাব। মানুষের কাছে টাকার নোট বাড়লেও সংসারে শান্তি নেই। শরীরে সুস্থতা নেই।

কৃপণতা ধ্বংস ডেকে আনে : বদান্যতা মানুষের রিজিক বৃদ্ধি করে। যারা আল্লাহর রাস্তায় মুক্তহস্তে দান করে কিংবা পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করে, মহান আল্লাহ তাদের জীবনকে বরকতময় করে তোলেন। তাদের রিজিকে বরকত দেন। এর বিপরীতে যারা অর্থলোভে কৃপণতা অবলম্বন করে, তারা নিজেদের জন্য ধ্বংস ও অভাব-অনটন ডেকে আনে। একদা রাসুল (সা.) ভাষণ দেন এবং বলেন, ‘তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে তাদের আত্মীয়তা ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন তারা তা-ই করেছে এবং তাদের পাপাচারে প্ররোচিত করেছে, তখন তারা তাতে লিপ্ত হয়েছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৯৮)

অবৈধ পন্থায় সম্পদ উপার্জন : অনেকে মনে করে, অঢেল সম্পদ অর্জনের জন্য ঈমান ও তাকওয়ার পথ ছেড়ে অবৈধ পন্থা অবলম্বনের বিকল্প নেই। অথচ রিজিকে বরকত আসার জন্য আল্লাহর ওপর ঈমান ও তাকওয়া অবলম্বন অত্যন্ত জরুরি। যে বান্দা এই দুটি জিনিস অর্জন করতে পারবে না, তার রিজিকে সংকীর্ণতা নেমে আসবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আর যদি জনপদগুলোর অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও জমিন থেকে বরকতগুলো তাদের ওপর খুলে দিতাম; কিন্তু তারা অস্বীকার করল। অতঃপর তারা যা অর্জন করল, তার কারণে আমি তাদের পাকড়াও করলাম।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৬)।

সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তাকদির রদ হয় না। মানুষ তার পাপকাজের দরুন তার প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২২)

তাই অঢেল সম্পদের লোভে পড়ে ঈমান ও তাকওয়ার পথ বর্জনের কোনো সুযোগ নেই। মহান আল্লাহ আমাদের উপরোক্ত পন্থায় সম্পদ উপার্জন থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ

আপনার মতামত জানান