যেভাবে সালাম দেওয়া সুন্নত

প্রকাশিত

সালাম ইসলামী সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মহানবী (সা.) মুসলিম সমাজে সালামের প্রসার ঘটানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সালাম বিনিময়ের ক্ষেত্রে কিছু ভুল পরিলক্ষিত হয়, যা সালামের মাহাত্ম্য নষ্ট করে। সালাম বিনিময়ে যে ভুল হয় নিম্নে তা তুলে ধরা হলো।

১. সালামের অপেক্ষা করা : বহু মানুষের ধারণা, ছোটরা ও অধস্তনরা সালাম দেবে এবং তারা উত্তর দেবে। তাই তারা অন্যের সালামের অপেক্ষা করে। ইসলামের শিক্ষা হলো বড়রাও ছোটদের সালাম দেবে; বরং যেকোনো বয়সের মানুষ আগে সালাম দিয়ে মর্যাদা লাভের চেষ্টা করবে।

২. সালাম শুনেও উত্তর না দেওয়া : কখনো কখনো অপছন্দের মানুষ সালাম দিলে ব্যক্তি তার উত্তর প্রদান করে না। অথচ অপছন্দনীয় ব্যক্তির সালামের উত্তর দেওয়াও ওয়াজিব।

৩. সালামের উত্তর দিয়ে আবার সালাম দেওয়া : উত্তম হলো, ব্যক্তি আগে সালাম দেবে। কিন্তু কেউ যদি সালাম দিয়ে ফেলে তবে শুধু সালামের উত্তর দেওয়াই দায়িত্ব। পুনরায় সালাম দেওয়া অগ্রহণযোগ্য।

৪. উত্তর না দিয়ে আবার সালাম : বড়রা সালাম দিলে কেউ কেউ উত্তর না দিয়ে আবার সালাম দেন। এ ধারণা থেকে সালাম দেওয়া তার দায়িত্ব ছিল। অথচ অন্য কেউ সালাম দিলে তখন উত্তর দেওয়াই নিয়ম এবং ওয়াজিব।

৫. উত্তর না পেলে ‘সালাম দিয়েছি’ বলা : সালাম দেওয়ার পর উত্তর না পেলে সালাম দিয়েছি বলার রীতি আছে। এটা ঠিক নয়। নিয়ম হলো, আবার সালাম দেওয়া এবং শ্রোতা সালাম শুনতে পায় এমনভাবে দেওয়া। সালামের উত্তর যেভাবে শুনিয়ে দিতে হয়, তেমনি সালামও শুনিয়ে দিতে হয়।

৬. নিম্ন স্বরে সালামের উত্তর দেওয়া : সালামের উত্তর শুনিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। তাই নিম্ন স্বরে বা মনে মনে সালাম দেওয়ার অভ্যাস পরিহারযোগ্য।

৭. অসময়ে সালাম দেওয়া : সালাম শুভেচ্ছা ও সৌজন্য বিনিময়ের মাধ্যম। সাক্ষাতের সময় তা বিনিময় করাই নিয়ম। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, মোনাজাত ও জানাজা শেষে সালাম বিনিময় করেন। এটি একটি ভুল প্রচলন।

৮. ভুল উচ্চারণে সালাম দেওয়া : সালাম এক প্রকার ইবাদত। বিশুদ্ধ মনে সালাম বিনিময় করলে ব্যক্তি সাওয়াবের অধিকারী হয়। তাই বিশুদ্ধ উচ্চারণে সালাম প্রদান করা আবশ্যক। কিন্তু বহু মানুষকে ভুল উচ্চারণে সালাম দিতে দেখা যায়। যেমন স্লামালাইকুম, সালামালাইকুম, আস্লামালাইকুম, সেলামালাইকুম ইত্যাদি। সালামের সঠিক উচ্চারণ হলো, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’।

সালাম প্রদানে কয়েকটি সুন্নত : হাদিসে সালামের কিছু শিষ্টাচার ও নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো।

১. যে যাকে সালাম দেবে : সুন্নত হলো আরোহী ব্যক্তি পদাতিক ব্যক্তিকে সালাম দেবে। অল্পসংখ্যক ব্যক্তি বেশিসংখ্যক লোককে সালাম দেবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আরোহী ব্যক্তি পদাতিক ব্যক্তিকে, পদাতিক ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে আর অল্পসংখ্যক ব্যক্তি বেশিসংখ্যক ব্যক্তিকে সালাম দেবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৩২)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ছোটরা বড়দের সালাম দেবে।

২. আগে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করা : সালাম আগে দেওয়া অনেক পুণ্যের কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সে-ই উত্তম ব্যক্তি যে প্রথমে সালাম দেয়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯৭)

৩. ঘরে প্রবেশের আগে সালাম প্রদান : ঘরে প্রবেশের পরে নয়, আগেই সালাম দেওয়া সুন্নত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি চাও অথবা সালাম প্রদান করো।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ২৭)

মহানবী (সা.) আনাস (রা.)-কে বলেন, ‘হে বৎস, যখন তুমি তোমার পরিবারের কাছে ফিরবে, তখন তাদের সালাম দেবে। এটা তোমার ও তোমার ঘরবাসীর জন্য বরকতের কারণ হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৬৯৮)

৪. মধ্যম আওয়াজে সালাম দেওয়া : মিকদাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এক রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) এলেন। তিনি সালাম দিলেন এমন আওয়াজে যে ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘুম ভাঙল না এবং জাগ্রত ব্যক্তিরা তা শুনতে পেল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২০৫৫)

৫. সমবেত মানুষের একজনকে সালাম না দেওয়া : বৈঠক বড় হলে তিন দিকে ফিরে তিনবার সালাম দেওয়া। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯৫)

৬. চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দেওয়া : পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে লক্ষ্য করে সালাম দেওয়া সুন্নত। এটি একজন আদর্শ মুসলিমের বৈশিষ্ট্য। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮)

আপনার মতামত জানান