মামুনুল হকের চুক্তিভিত্তিক বিয়ে, আইন কী বলে?
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হক গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতারের পর তাক সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডের প্রথম দিনেই তার প্রথম স্ত্রী আমেনা তৈয়বা ছাড়াও অন্য দুই নারীকে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করে তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছেন।
তবে, মামুনুল হকের কথিত ‘চুক্তিভিত্তিক বিয়ে’ রাষ্ট্রীয় বা শরিয়াহ আইনে বৈধ নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘বিয়ের কাবিননামা’ দেখতে চাইলে মামুনুল হক গোয়েন্দাদের জানান, প্রথম স্ত্রী ছাড়া অন্য দুই নারীর সঙ্গে দীর্ঘদিন বসবাস করলেও বিয়ে রেজিস্ট্রি করেননি। তাই বিয়ের কোনো কাবিননামাও নেই। তবে, এই দুই নারীর ভরণপোষণ নিয়মিত দেওয়ার চুক্তিতে তাদের সঙ্গে স্ত্রীর মতো আচরণ করে আসছেন বলে জানান এই হেফাজত নেতা।
চুক্তিভিত্তিক বিয়ে রাষ্ট্রীয় বা সুন্নি আইনে বৈধ নয়। মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন-১৯৭৪ অনুযায়ী, কোনো বিয়ে যদি নিবন্ধিত কাজি ছাড়া অন্য কেউ পড়ান সেক্ষেত্রে ৩০ দিনের মধ্যে বিয়েটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই আইন লঙ্ঘন করতে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডসহ উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
এ ছাড়া ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান মোতাবেক বিয়ে রেজিস্ট্রি হতে হবে।
চুক্তিভিত্তিক বিয়ে বা মুতা বিয়ে কী?
মুতা শব্দের আভিধানিক অর্থ হল উপভোগ বা ব্যবহার করা। এই ধরনের বিয়ে একদিন, এক মাস, এক বছর বা বহু বছরের জন্য হতে পারে। আবার দিনের কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যও মুতা বিয়ে হতে পারে। মুসলিম আইনে মুতা বিয়ে বলতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিয়ে করাকে বোঝায়। আকবরী শিয়া মুসলমানদের মধ্যে এমন বিয়ের প্রচলন ছিল। বর্তমানে মুতা বিয়ের প্রচলন নেই। তবে সুন্নী আইনে মুতা বিয়ে মোটেই স্বীকৃত নয়।
অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল সাইয়েদ বলেন, ১৯৪৭ সালের আগে বিয়ে নিবন্ধিত ছিল না। তবে ১৯৪৭ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইন এবং পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেন আইনের তিন ধারায় বিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্দিষ্ট দেনমোহর ধার্য করে, দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে রেজিস্ট্রি করার মাধ্যমেই কেবল বিয়ে আইনগত বৈধতা পায়।
এদিকে মামুনুল হক যে চুক্তিভিত্তিক বিয়ের দাবি করেছেন তা ইসলাম সমর্থন করে না, এ ধরনের বিবাহ ইসলামে অনুমোদিত নয় বলেও দাবি করেছেন হাক্কানী আলেম সমাজ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এমন দাবি করে বুধবার (২১ এপ্রিল) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন সংগঠনটির নেতারা। সূত্রঃ যুগান্তর।
আপনার মতামত জানান