মানসিক অসুস্থতা নয়—এটি এক সামষ্টিক নৈতিক পতনের নির্মম প্রতিচ্ছবি -শাহেদ কায়েস

প্রকাশিত

 

শাহেদ কায়েস:

একজন নারী আটটি কুকুরছানাকে বস্তাবন্দী করে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেছে—সংবাদের এই ছোট্ট বাক্যটি আমাদের সমাজের গভীরতম অন্তঃস্থলে প্রচণ্ড ধাক্কা দেয়। একটি প্রাণও যখন ব্যথা পায়, তখন পৃথিবীর পরিমণ্ডল কেঁপে ওঠে; সেখানে আটটি নবজাতক জীব, যারা এখনো পৃথিবীর নিষ্ঠুরতা চিনেও ওঠেনি—এভাবে নিধন!

আমরা প্রায়ই শুনি, “এমন কাজ নিশ্চয়ই মানসিক অসুস্থতার ফল।” কিন্তু সত্য হলো—এ ধরনের বর্বরতা শুধুমাত্র ব্যক্তির মানসিক সমস্যার পরিচয় নয়, আমাদের সমাজের নৈতিক কাঠামোতে কোথাও কোনো বড় ফাটল তৈরি হয়েছে বলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। যে সমাজে প্রাণীর যন্ত্রণা তুচ্ছ, সেখানে মানুষের যন্ত্রণাও ধীরে ধীরে অবমূল্যায়িত হতে থাকে। কুকুরশাবকগুলো তো শিশু ছিল—তাদেরও তো আলোর দিকে মুখ ফেরানোর স্বপ্ন ছিল। মা-কুকুরের চোখে যখন তার সন্তানদের অচেতন দেহ ভেসে উঠেছিল, সেই আর্ত চাহনির ব্যথা কি আমরা ধারণ করতে পারি? মানুষ মনে করতে পারে, “ওরা তো পশু”—তাহলে সেই মানুষত্বই প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণ তার ক্ষুদ্র জীবন নিয়ে এই পৃথিবীতে আগমনের অধিকার রাখে। প্রাণী হত্যা আইনের চোখে অপরাধ—কিন্তু আমাদের সামাজিক বিবেকেও এটি অপরাধ হওয়া উচিত। আমরা কি সত্যিই সভ্য?

আমরা কি বুঝতে পারি না—যে সমাজ দুর্বল প্রাণীকেও রক্ষা করতে পারে না, সে সমাজ একসময় দুর্বল মানুষকেও রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়? মানবিকতা—এখনও কি আমাদের ভেতরে আছে?

এই ভয়াবহ ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় অমানবিকতা কখনো হঠাৎ জন্মায় না, এটি সমাজের ভেতরের দীর্ঘদিনের নীরবতা, উদাসীনতা এবং নিষ্ক্রিয়তার ফল। আজ আমরা যদি বলি, “এটা খুব খারাপ হয়েছে,” কিন্তু আগামীকাল যদি আবার সেই নীরবতায় ফিরে যাই—তাহলে আমরা সবাই এই অপরাধের অংশীদার।

আমরা যেন মনে রাখি—মানুষ যেখানে ভালোবাসা হারায়, সেখানে প্রথম মৃত্যু ঘটে দুর্বল প্রাণীর; এবং পরের মৃত্যু ঘটে মানুষের।

লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক, সংস্কৃতিকর্মী ও গবেষক

আপনার মতামত জানান