মাদক দিয়ে ছেলেকে ফাঁসাতে গিয়ে পুলিশ ও সোর্সের চড়-ধাক্কায় মায়ের মৃত্যু
ডেইলি সোনারগাঁ >>
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় মাদক দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে পুলিশ ও পুলিশের সোর্সের চড় ও ধাক্কায় স্টোক করে মাদক ব্যবসায়ীর মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ করেছে নিহতের স্বজনরা। গতকাল রোববার রাত ১০টায় এ ঘটনা ঘটে। পরে নিহতের ছেলে সজিব মিয়া (৩০) কে ইয়াবা ও গাজাসহ আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
খবর পেয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতের স্বজনদের শান্ত থাকার আহবান জানান এবং নিহতের ছেলে সজিব মিয়া (৩০) কে ইয়াবা ও গাজাসহ আটক করা হয়েছে বলে জানান। জোসনা বেগমের মৃত্যু ষ্টোকের কারনে হয়েছে মর্মে একটি লিখিত মুচলেকা নিয়ে আসেন সোনারগাঁ থানা পুলিশ।
এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বাড়িমজলিশ গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে সজিব মিয়া (৩০) একসময় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ছিল। তার মা তাকে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার জন্য মায়ের মাথায় হাত রেখে শপথ পড়ালে সে গত তিনবছর যাবত মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেয়। মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার পর পুলিশ তাকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে। গত আটমাস আগে সোনারগাঁ থানা পুলিশের এক এসআই তাকে দুইদিন নিখোজ রেখে তার পরিবারের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়।
গতকাল রোববার রাত ১০টায় সোনারগাঁ থানার এসআই হাবিব মিয়া ও এসআই মনির হোসেনের নেতৃত্বে ৩ জন পুলিশ এবং পুলিশের দুজন সোর্স হাবিবপুর গ্রামের সাঈদ মিয়ার ছেলে ইয়াবা ব্যবসায়ী পিয়েল মিয়া (২৭) ও উদ্ধবগঞ্জ এলাকার পাগলা সজিব (২৮) বাড়িমজলিশ গ্রামে সজিব মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের সোর্স পিয়েল সজিবের ঘরে প্রবেশ করে তার ৭ বছরের ঘুমন্ত মেয়ের বালিশের নিচে ৫০ পিছ ইয়াবা রেখে দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে তার ঘর তল্লাশী করে তার মেয়ের বালিশের নিচ থেকে ৫০ পিছ ইয়াবা উদ্ধার করে। সজিব মিয়াকে আটক করে নিয়ে আসার চেষ্টা করলে সজিবের মা জোসনা বেগম এসআই মনির হোসেনের পা জড়িয়ে ধরে জানায় তার ছেলে এখন আর মাদক ব্যবসা করে না। সজীবকে ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুনয় করতে থাকলে এসআই মনির হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং মহিলাকে সরিয়ে নিতে সোর্সদের হুকুম দিলে সোর্স পিয়েল টেনে তুলে জোসনা বেগমকে চড় দেয় এবং মনির হোসেন জোড় করে পাঁ সরিয়ে নিলে আঘাত পেয়ে জোসনা বেগম অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এসময় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করে।
এদিকে সজিবের মা জোসনা বেগম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে এলাকাবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। পুলিশ অবস্থা বেগতিক দেখে সজিবকে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। খবর পেয়ে সোনারগাঁ থানার একদল পুলিশ মৃত জোসনা বেগমের পরিবারকে শান্তনা দেয়ার জন্য তার বাসায় যান।
এ ব্যাপারে সজিব মিয়া জানান, গতকাল রাতে পুলিশের সঙ্গে দুজন সোর্স ঘরে ঢুকে তার বালিশের নিচে ইয়াবা ও গাঁজা রেখে দেয়। পরে পুলিশ পাশের ঘর থেকে সজিবকে আটক করে তার ঘরের বালিশের নিচ থেকে ইয়াবা ও গাঁজা উদ্ধারের নাটক করে।
সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান মাদক দিয়ে সজিব মিয়াকে ফাঁসানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সে পুলিশের তালিকাভুক্ত একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার ঘরে অভিযান চালিয়ে ৫০ পিস ইয়াবা ও গাঁজাসহ আটক করা হয়েছিল। তার মায়ের মৃত্যুর পর মানবিক কারনে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, ঘটনার পর আমরা পুরো বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশের কোনো অনিয়ম খুজে পাওয়া যায়নি। পুলিশের নাম ব্যবহার করে কোনো সোর্স অনিয়ম করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত জানান