মহান আল্লাহ নবীজি (সা.)-কে যেভাবে রক্ষা করেছিলেন
মোঃ আবদুল মজিদ মোল্লা
নবুয়ত লাভের পর মহানবী (সা.) যখন মানুষকে ইসলামের পথে আহবান জানানো শুরু করলেন, তখন নবীজি (সা)-এর প্রতি শত্রুতায় লিপ্ত হয় আরবের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। কিন্তু আল্লাহ তাঁর নবীকে সব শত্রুর কবল থেকে রক্ষা করেন। আর এটা মূলত মহান আল্লাহর অঙ্গীকারেরই অংশ। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ রক্ষা করেন মুমিনদের, তিনি কোনো বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না। (সুরা হজ, আয়াত : ৩৮)
১. দোয়া কবুলের মাধ্যমে : কুরাইশের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মহানবী (সা.) তাদের বিরুদ্ধে দোয়া করলে তা কবুল হয়। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কুরাইশদের ইসলামের দাওয়াত দিলেন এবং তারা তাঁকে মিথ্যাচারী বলল ও তার নাফরমানি করল, তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ, ইউসুফ (আ.)-এর সময়ে সাত বছরের দুর্ভিক্ষের মতো দুর্ভিক্ষের দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কোরো। ফলে দুর্ভিক্ষ তাদের এমনভাবে গ্রাস করল যে নির্মূল হয়ে গেল সব কিছু; অবশেষে তারা মৃতদেহ খেতে আরম্ভ করল। তাদের কেউ দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার জ্বালায় সে তার ও আকাশের মাঝে ধোঁয়ার মতোই দেখতে পেত। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৮২৩)
২. ফেরেশতা দ্বারা নিরাপত্তা দান : একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ আদায় করছিলেন। এমন সময় আবু জাহেল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর গর্দানকে পদদলিত করার উদ্দেশে তাঁর কাছে এলো। একটু অগ্রসর হয়ে অকস্মাৎ সে রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে মুখ ফিরিয়ে দ্রুত পেছনে সরে এলো এবং দুই হাত দিয়ে নিজেকে বাঁচাতে লাগল। এটা দেখে তাকে প্রশ্ন করা হলো, তোমার কী হয়েছে? উত্তরে সে বলল, আমি দেখেছি যে আমার এবং তাঁর মধ্যে আগুনের একটা প্রকাণ্ড খাদক, ভয়াবহ অবস্থা এবং কতগুলো ডানা। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সে যদি আমার কাছে আসত, তবে ফেরেশতারা তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলত। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৯৫৮)
৩. পাহাড়ের ফেরেশতা দ্বারা : মহানবী (সা.) যখন তায়েফ থেকে ফিরছিলেন আল্লাহ তাঁর কাছে পাহাড়ের ফেরেশতা পাঠান এবং সে এসে তাঁকে সালাম দিয়ে বলে, হে মুহাম্মদ, এসব ব্যাপার আপনার ইচ্ছাধীন। আপনি যদি চান, তাহলে আমি তাদের ওপর আখশাবাইনকে (তায়েফের দুই প্রান্তের পাহাড়) চাপিয়ে দেব। উত্তরে নবী (সা.) বললেন; বরং আশা করি মহান আল্লাহ তাদের বংশ থেকে এমন সন্তান জন্ম দেবেন, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে আর তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩২৩১)
৪. দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিয়ে : যে রাতে মহানবী (সা.) মদিনার উদ্দেশ্যে ঘর ছাড়েন, সে রাতেই মক্কার মুশরিক যুবকরা তাঁকে হত্যা করার জন্য ঘরের চারদিকে ঘেরাও করে। কিন্তু মহানবী (সা.) এক মুঠ ধুলা হাতে নিয়ে সুরা ইয়াসিনের প্রথম ৯ আয়াত পাঠ করেন এবং ধুলা মুশরিকদের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করেন। এতে তারা দৃষ্টি হারায় এবং নবীজি (সা.) তাদের চোখের সামনে দিয়ে বের হয়ে যান। (দালায়িলুন নুবুয়ত : ২/৪৬৯)
৫. ঘোড়ার পা ধসিয়ে : আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনার দিকে বের হলেন। তখন সুরাকা ইবনে মালিক তাঁর পশ্চাদ্ধাবন করল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার ওপর বদ্দোয়া করলে তার ঘোড়া জমিনে দেবে গেল। সে বলল, আমার জন্য দোয়া করুন, আমি আপনার কোনো ক্ষতি করব না। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২০০৯)
৬. মনোযোগ সরিয়ে দিয়ে : আবু বকর (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-এর সঙ্গে (সাওর) গুহায় ছিলাম। তখন আমি মুশরিকদের পদচিহ্ন দেখতে পেয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, যদি তাদের কেউ পা ওঠায় তাহলে আমাদের দেখে ফেলবে। তখন তিনি বললেন, এমন দুজন সম্পর্কে তোমার কী ধারণা, যাদের তৃতীয়জন হলেন আল্লাহ। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৬৬৩)
৭. বিষ নিষ্ক্রীয় করে : খায়বার বিজয়ের পর মহানবী (সা.)-কে একজন উহুদি নারী বিষযুক্ত বকরির গোশত খেতে দেয়। নবীজি (সা.) সেই গোশত মুখে দিয়ে চিবিয়ে ফেলে দেন। এই খাবার খেয়ে অপর এক সাহাবির ইন্তেকাল হয়। কিন্তু আল্লাহ তাঁর নবীকে রক্ষা করলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১৬৯)
লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা
সুত্র: কালের কন্ঠ
আপনার মতামত জানান