ভোটারদের দীর্ঘ সারি, ভোটগ্রহণে বিলম্ব
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয় আজ বুধবার সকাল ৮টায়। তবে ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই ইভিএমের ধীরগতি ভোটারদের বেশ ভোগাচ্ছে। আজ বুধবার (১৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডের ১৫টি কেন্দ্রে একই চিত্র দেখা গেছে। এসব কেন্দ্রে ১৬ থেকে সর্বোচ্চ ৪৪ শতাংশ ভোটগ্রহণ হতে দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটাররা বৃষ্টিতে ভিজেছেন। বৃষ্টি শেষে রোদের উত্তাপেও পুড়ছেন তারা।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ইভিএম মেশিন ব্যবহার করে ভোট দিতে না পারায় ভোটারদের ভোটগ্রহণে অনেক দেরি হচ্ছে। এ কারণে বাইরে দীর্ঘ সারি তৈরি হচ্ছে।
সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তেলিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটাররা বুথের বাইরে হৈচৈ করছেন। তারা জোর করে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদরকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে ভোটারদের সারি কেন্দ্র ছাড়িয়ে চলে গেছে পাশের সড়কে। ভোটারদের উপস্থিতির কারণে সড়কটিতে যেন চলাফেরা দায় হয়ে পড়ে মানুষের।
ওই কেন্দ্রে কথা হয় ৬০ বছর বয়সী শাহ আলম মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ভোট শুরুর এক ঘণ্টা আগে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। তবে সকাল সাড়ে ১০টা বাজলেও এখনো ভোট দিতে পারিনি। মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে। এর মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে গেছি। বলতে গেলে আমার ভোট দিতে চার ঘণ্টা লাগছে। চরম ধীরগতিতে ভোট নেওয়া হচ্ছে।
ওই কেন্দ্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ড.সফিউল আজম বলেন, ভোটাররা এখনো ইভিএমে পুরোপুরি অভ্যস্ত হতে পারেনি। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তিন হাজার ৩৩৬ জনের মধ্যে ভোট প্রয়োগ করেছে ৫৫৮ জন। ভোটের হার ১৬ শতাংশ। আর বৃষ্টির কারণে ভোটারদের লাইন কিছুটা এলোমেলো হয়ে গেছে। যার কারণে ধীরগতিতে ভোটগ্রহণ হচ্ছে।
নগরীর চন্দ্রপুর এলাকায় সকাল ৮ টা ৪০ মিনিটে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারদের ভিড়ে দ্রুত ভোটগ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলে ভোটাররা বৃষ্টিতে ভিজে কেন্দ্রের ফটকে ভিড় জমান। কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলার ৫ নম্বর কক্ষে দুটি বুথের ৭০৬ জন ভোটারের মধ্যে তখন ৫৭ জনের ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রিজাইডিং অফিসার তানভির ইসলাম বলেন, মেশিনে ভোট দিতে ধীরগতি এবং ভুল কক্ষে ভোটাররা চলে আসার কারণে ভোটগ্রহণে অনেকটা দেরি হচ্ছে।
২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বজ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নারী ও পুরুষ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটাররা বৃষ্টিতে ভিজে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। মৌলিপাড়া এলাকার গৃহিণী তাসলিমা বেগম বলেন, আটটার সময় ভোট দিতে এসেছি, বৃষ্টিতে ভিজতেছি, সাড়ে ৯টা বাজে, এখনো ভোট দিতে পারিনি।
কেন্দ্রের ৪ নম্বর বুথে ঢুকে দেখা গেছে, সেখানে ৪১৩ ভোটের মধ্যে সকাল ৯টা ৩৫-এ মাত্র ২৬টি ভোট গ্রহণ করা গেছে।
ভবনের তৃতীয় তলায় পুরুষ ভোটকেন্দ্রের ৪ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ৩৭৩টি ভোটের মধ্যে ৫৯টি ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।
সকাল ১১টায় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কুমিল্লা হাউজিং স্টেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে ভোটগ্রহণে ধীরগতি দেখা গেছে। এখানেও বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করছেন অনেক পুরুষ ভোটার। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার নাসিরুদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, সকাল ১১টা পর্যন্ত ২৯১৬ ভোটারের মধ্যে ৫৬৫টি ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। লোকজন মেশিনে ভোট দিতে পারে না, সমস্যা হয়, এ কারণে দেরি হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে একটি মেশিনে সমস্যা হয়েছিল। আমাদের কাছে অতিরিক্ত মেশিন ছিল। সেটি পরিবর্তন করা হয়েছে।
২১ নম্বর ওয়ার্ডের আশরাফপুর এলাকার কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ কেন্দ্রীয় নারী-পুরুষ ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। প্রিজাইডিং অফিসার রাসেল আল মামুন জানান,৩০১৫ পুরুষ ভোটারের মধ্যে সকাল সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ৫৫০ ভোটগ্রহণ করা গেছে।
১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নেউরা মমিনুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে পুরুষ ভোটারদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার নাজমুল আমিন বলেন, ১৮৫৩ ভোটারের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪৭৫টি ভোট গ্রহণ করা গেছে।
দুপুর ১টার দিকে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়ালবাথান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে নারী ভোটকেন্দ্রে লাইনে দাঁড়ানো ভোটার সাজেদা বেগম বলেন, সকালে একবার এসে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টিতে ভিজেছি। তারপর বাসায় চলে গিয়েছিলাম। এখন আবার এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি, কত সময় লাগে জানি না।
কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার শামীম আহমেদ বলেন, ২২৮১ ভোটারের মধ্যে দুপুর ১টা পর্যন্ত ১০০৫ ভোটার ভোট দিয়েছেন। ভোটগ্রহণের হার ৪৪ শতাংশ।
১০টার দিকে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রের (৪১ নম্বর কেন্দ্র) তিন বুথে তিন ঘণ্টায় দেখা যায় ২১২ ভোট পড়েছে। এই কেন্দ্রের মোট ভোটার এক হাজার ৩৬ জন।
দুপুর ১টায় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়াল মথন আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায়, পুরুষদের ১ নম্বর বুথে মোট ভোটার ৩৯১ জন হলেও ভোট পড়েছে ১৮৭টি, পাশের পুরুষদের ২ নম্বর বুথে ৩৯১ ভোটের মাধ্যে কাস্ট হয়েছে ১৯৯টি। তিন নম্বর বুথে ৩৯০ ভোটের মধ্যে ১৬৯ ভোট পড়েছে। আর নারীদের ৪ নম্বর বুথে ৩৭১ ভোটের মধ্যে ১৮০ ভোট কাস্ট হয়েছে।
আপনার মতামত জানান