ভালো ফলনের আশায় শুরু ইতুপুজো!
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। একথা সর্বজনবিদিত। সারা বছর জুড়েই চলে শিব, দুর্গা, কালী, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ-সহ প্রধান দেবদেবীর পুজো, তার সঙ্গে থাকেন আবার বিভিন্ন আঞ্চলিক উপদেব বা দেবী। যেমন-মনসা, ইতু, ঘেঁটু, ভাদু, টুসু অরোও অনেকে। তবে ইদানিং এই উপদেবদেবীরা খুব একটা পুজো পান না। প্রযুক্তির দৌলতে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার ব্রতকথা। আমাদের রাজ্যের মেয়েরা অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি রবিবার ইতু ঠাকুরের পুজো করে থাকেন। ইতু পুজোর নিয়ম প্রসঙ্গে বলা হয়েছে কার্ত্তিক মাসের সংক্রান্তি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তি পর্যন্ত পুজোর নিয়ম।
এই বছর কার্তিক মাসের সংক্রান্তি পড়েছে ইংরেজি ক্যালেন্ডারে ১৭ নভেম্বর। সেদিন কার্তিক পুজোও হয়ে থাকে।
কিন্তু এই ইতু আসলে কে? ইতুর এক নাম মিত্র। অগ্রহায়ণ মাসে সূর্য মিত্র নামেই পরিচিত। প্রতি রবিবার উপবাস রেখে পুজো করা হয় বলে একে সূর্যের পুজোও বলা হয়ে তাকে। অবশ্য ইতু পুজোকে সূর্য উপাসনা বলা হলেও এই পুজোর রীতিও উপাচার বিশ্লেষণ করে ইতুকে মাতৃদেবী রূপেই গণ্য করেন অনেকে। ইতুর ঘটের গায়ে পুতুলি আঁকা এবং ভেতরে দেওয়া হয় শস্যদানা ও তৃণগুচ্ছ। খড়ের বিঁড়ের উপরেই ইতুর সরাকে বসানো হয়। এর পর ওই সরাতে দেওয়া হয় মাটি। মাটি পূর্ণ সরার মাঝে ঘট স্থাপন করতে হয়। আর বাকি অংশে থাকে কলমী, সরষে, শুষনীর মূলসহ শাক। এ ছাড়া ধানের বীজ, মানকচুর মূল লাগানো হয়। আর ছোলা মটর মুগ তিল যব সহ আট রকমের শস্যের বীজও ছড়ানো হয়ে থাকে।
ইতু গ্রাম বাংলার লক্ষ্মীর সঙ্গে মিশে হয়ে উঠেছেন শস্য, সৌভাগ্য আর মঙ্গলের প্রতীক। কুমারী মেয়েদের পতিলাভ বা বিবাহিত মেয়েদের সন্তানলাভের আকাঙ্ক্ষা তথা সংসারের কল্যাণ কামনাতেও ইতু পুজো বহু প্রাচীন কাল থেকে হয়ে চলেছে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে। পুজো শেষে সবাই গোল হয়ে শুনতে বসে ব্রতকথা। ইতুব্রতকথায় বলা হয়েছে, ‘অষ্টচাল অষ্টদুর্বা কলসপত্র ধরে। ইতুকথা একমনে শুন প্রাণ ভরে।’
আপনার মতামত জানান