ভালোবাসার অনন্য নিদর্শন ৩৬৫টি পুকুর খনন

প্রকাশিত



৮ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ৩৬৫ টি পুকুরের অবস্থান। পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ। রাণীকে দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত করার জন্য কবিরাজ-হাকিমের পরামর্শে সেই ৩৬৫টি পুকুর খনন করেছিলেন পাল বংশের রাজা চান্দিলাল পাল! মমতাজের স্মৃতিতে বাদশা শাহজাহানের তাজমহল নির্মাণের মতন যুগে যুগে এমন অনেক ভালোবাসার অমর কাহিনী আমাদের লোকগাঁথায় বিবৃত হয়েছে। লোকমুখে প্রচলিত তেমনি একটি অমর প্রেমের কাহিনীর নির্দশন হচ্ছে নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ধামইরহাট উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নের চক-চান্দিরা গ্রামে কথিত পাল বংশের রাজা চান্দিলাল পাল কর্তৃক খননকৃত ৩৬৫টি পুকুর। ৮ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত পাশাপাশি পুকুরগুলো পূর্ব -পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এবং কিছু পুকুর চৌকোনাকৃতি।

জনশ্রুতি আছে যে, অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই অঞ্চলের রাজা, রাজা চান্দিলাল পাল প্রথম রাণীর উপস্থিতিতেই প্রেমে পড়ে প্রচণ্ড ভালোবেসে দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং সেই দ্বিতীয় রাণীকেও প্রাসাদে নিয়ে আসেন। কিন্তু ভাগ্যের বিড়ম্বনায় মধুচন্দ্রিমা কেটে ওঠার আগেই দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হন দ্বিতীয় রাণী। রাণীর রোগ নিরাময়ের জন্য রাজা চান্দিলাল রাজ্যের সব কবিরাজ-হাকিমকে ডেকেও কোনও সুফল না পেয়ে যখন দিশেহারা তখন তিনি পাশের রাজ্যের এক দক্ষ হাকিমের খবর পান। তিনি দূত মারফত হাকিমকে নিজ রাজ্যে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। হাকিম আসার পর রাণীর রোগ সম্পর্কে সব শুনে হাকিম রাজাকে পরামর্শ দেন, রাণীকে সুস্থ করতে চাইলে রাজাকে ৩৬৫টি পুকুর খনন করতে হবে এবং রাণীকে প্রতিদিন একটি করে পুকুরে গোসল করাতে হবে, তাহলে রাণী দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পাবেন।

হাকিমের কথায় রাজা চিন্তায় পড়ে যান। এতো অল্প সময়ে কীভাবে এতো পুকুর খনন করাবেন? ভালোবেসে বিয়ে করা প্রিয়তমা স্ত্রী বলে কথা। হাকিমের পরামর্শ অনুযায়ী রাজা দ্রুত রাজ্যের সব প্রজাকে দিয়ে পুকুর খননের কাজ শুরু করেন। দিনে একটি পুকুর খনন করা শেষ হয় আর রাণী সেখানে গোসল করেন। এক বছর পর রাণী কঠিন দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্তি পান।

বর্তমানে চকচান্দিরা গ্রামে, ৩৬৫টির প্রতিটি পুকুরের পাড়ে বন বিভাগের সুবিশাল সবুজ বনায়ন। বনের গাছের ডালে বিভিন্ন পাখির কলরব শুনতে পাওয়া যায়। এ ছাড়াও পাশে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রয়েছে বন বিভাগের নজরকাড়া সৌন্দর্যের নিজস্ব সবুজ বনায়ন।

প্রায় আট কিলোমিটার জুড়ে ৩৬৫টি পুকুর ছাড়াও, দুই রাণীর গোসলের জন্য আলাদা দুটি পুকুর খনন করা হয়েছিলো, যে দুটি এখন ‘দুই সতীনের পুকুর’ নামে পরিচিত। পুকুর দুটিতে গোসল করতে নামলে ইট-পাথরসহ অনেক মূল্যবান বস্তুর দেখা পাওয়া যায়। কথিত আছে, এখানে পুকুরে পাথর একা চলাফেরা করতো বলে পুকুরের নামকরণ করা হয়েছিলো ‘পাথর পকড়া’ও।

কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সেই রাজা, রাজ্য আর রাজপ্রসাদ। কিন্তু মানুষের মুখে মুখে আজও রয়ে গেছে সেই কাহিনি। পুকুরের পাড়ে বন বিভাগের রয়েছে সবুজ বনায়ন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে এখানকার ইতিহাস ও নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের জন্য উপযুক্ত পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

আপনার মতামত জানান