ব্রাজিলের চেয়ে আর্জেন্টিনার জার্সি-পতাকার বিক্রি বেশি

প্রকাশিত



কাতার বিশ্বকাপ শুরু হতে বাকি ৩ দিন। বিশ্বকাপ উপলক্ষে বেড়েছে জার্সি ও পতাকা বিক্রি। দেশের বাজারগুলোতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের জার্সি-পতাকা। এর পাশাপাশি জার্মানি, ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেনের জার্সি ও পতাকাও বিক্রি হচ্ছে। গুলিস্থান ও এর আশেপাশের ১০ জন পাইকারি বিক্রেতা জানান, এ বছর ব্রাজিলের চেয়ে আর্জেন্টিনার জার্সি ও পতাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স, টুইন টাওয়ার স্পোর্টস ও বিভিন্ন ফুটপাতের দোকান ঘুরে জানা গেছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বিক্রি কম হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে, তাদের বিক্রি তুলনামূলক ভালোই হচ্ছে। বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম রয়েছে।

গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় পাইকারি জার্সি ও পতাকা বিক্রেতা জয় স্পোর্টসের মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মতিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিক্রিতে খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি। জার্সি ও পতাকা বিক্রি হচ্ছে। সবার মধ্যে উৎসব বিরাজ করছে। অনেকেই পরিবারসহ জার্সি কিনতে আসছেন। খেলা নিয়ে মানুষের উদ্দীপনা অনেক বেশি।’

কোন দেশের জার্সি ও পতাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্রাজিলের তুলনায় আর্জেন্টিনার জার্সি ও পতাকার চাহিদা তুলনামূলক বেশি। বলতে পারেন, ৬০ শতাংশ আর্জেন্টিনা ও ৪০ শতাংশ ব্রাজিলের জার্সি ও পতাকা বিক্রি হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেসির অনেক বেশি ভক্ত আছেন। তার জনপ্রিয়তার কারণে আর্জেন্টিনার জার্সি বিক্রি হচ্ছে বেশি।’

গুলিস্তানের অন্তত ১০টি দোকান ও ফুটপাতের বেশ কয়েকজন বিক্রেতা জানান, দেশীয় বাজারে আর্জেন্টিনার জার্সি ও পতাকার চাহিদা তুলনামূলক বেশি।

১৯৮২ সাল থেকে স্পোর্টস আইটেমের ব্যবসা করেন আব্দুল মতিন। অন্যান্য সময়ে তার প্রতিদিন বিক্রি হয় ২০ হাজার টাকা। বিশ্বকাপ উপলক্ষে তার দৈনিক বিক্রি বেড়ে দাঁড়িয়েছে লাখের বেশি।

আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমাদের বাজারে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজারের মতো জার্সি বিক্রি হয়। আমি প্রায় ৭০ শতাংশ দেশি জার্সি এবং ৩০ শতাংশ বিদেশি জার্সি, বিশেষ করে চীনের জার্সি বিক্রি করি। সাড়ে ৩ ফুট সাইজের পতাকা বিক্রি করছি ৫০ টাকায় এবং ৫ ফুট সাইজের পতাকা ৮০ টাকায়। দেশি জার্সি ১৩০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত এবং চীনে তৈরি জার্সিগুলো ৭০০ থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। প্লেয়ার ভার্সন জার্সির দাম সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি জার্সি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকার ওপরে।’

নিউ বৈশাখী স্পোর্টসের স্বত্বাধিকারী মো. অহিদুল রাব্বানী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি মূলত চীনা জার্সি বিক্রি করি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ভেবেছিলাম জার্সি কম বিক্রি হবে। তাই বেশি জার্সি রাখিনি। কিন্তু এ বছর জার্সির চাহিদা তুলনামূলক বেশি। আমার কাছে বিক্রি করার মতো এখন কোনো জার্সিই নেই।’

গেণ্ডারিয়া থেকে বাবার সঙ্গে জার্সি কিনতে এসেছে ৫ বছরের শিশু আদিল আহমেদ সোহান।

কোন দলের জার্সি কিনবে জানতে চাইলে সোহান বলে, ‘মেসির জার্সি কিনবো। মেসিকে আমার অনেক ভালো লাগে।’

গতকাল বুধবার গুলিস্তানে জার্সি কিনতে এসেছিলেন ২ বন্ধু মারুফ খান ও ইমন রহমান। মারুফ ব্রাজিলের ও ইমন আর্জেন্টিনার সাপোর্টার।

দল নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয় কি না, জানতে চাইলে ইমন বলেন, ‘আমরা ঝগড়া করি, মজাও করি। কোন দল জিতবে, কোন দল ভালো, এগুলো নিয়ে তর্ক করতে ভালো লাগে।’

তারা দুজনেই আশাবাদী যে তাদের দল এবার বিশ্বকাপ জিতবে।

অহনা স্পোর্টসের মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘মিডিয়াম, লার্জ, এক্সএল সাইজের জার্সি বেশি বিক্রি হচ্ছে। ফুলহাতা জার্সির দাম হাফহাতার চেয়ে প্রায় ৫০ টাকা বেশি। আমার এখানে দেশি জার্সি বিক্রি হয়। প্রতিটি জার্সির দাম মান ভেদে ৩৫০-৫০০ টাকা। আর্জেন্টিনার জার্সি এবার বেশি বিক্রি হচ্ছে।’

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেলাঘরের স্বত্বাধিকারী আলআমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর জার্সি বিক্রি বেশি হচ্ছে। তবে ২ সপ্তাহ আগে যে জার্সির দাম ছিল ৬০০ টাকা সেই জার্সির দাম এখন ৮০০ টাকার বেশি। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি জার্সির দাম ২০০-২৫০ টাকা বেড়ে গেছে।’

টুইন টাওয়ার স্পোর্টসের মাসুক চিশতি বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বাজারে যোগান কম। তাই জার্সির দাম তুলনামূলক বেশি। আমাদের নিজস্ব কারখানা আছে। গ্যাস সংকটের কারণে কারখানায় জার্সি তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে।’

আপনার মতামত জানান