বিশ্বের ৪০টি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ
বিশ্বের ৪০টি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর্তমানবতার সেবা দিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সুনাম। ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৬৯ জন বাংলাদেশি অংশগ্রহণে ৪০টি দেশে জাতিসংঘের ৫৪টি শান্তিরক্ষা মিশন সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫৩ জন এবং পুলিশের ২০ হাজার ৩১৬ জন সদস্য ছিলেন। সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সেনাবাহিনীর ১ লাখ ৪২ হাজার ৭৯০ জন, নৌবাহিনীর ৬ হাজার ১২ জন এবং বিমানবাহিনীর ৭ হাজার ৫৫১ জন ছিলেন। এদের মধ্যে নারী শান্তিরক্ষী ছিলেন ২ হাজার ১৮৪ জন। তাদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ৪২৯ জন, নৌবাহিনীর ২২ জন, বিমানবাহিনীর ১১০ ও পুলিশ বাহিনীর ১ হাজার ৬২৩ জন নারী সদস্য।
বর্তমানে জাতিসংঘের ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৭৪২ জন শান্তিরক্ষী কর্মরত রয়েছেন। এরমধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর ৬ হাজার ২৪১ জন এবং পুলিশ সদস্য ৫০১ জন। সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সেনাবাহিনীর ৫ হাজার ৩০৮ জন, নৌবাহিনীর ৩৪৫ জন এবং বিমানবাহিনীর ৫৮৮ জন শান্তিরক্ষী কর্মরত আছেন। বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীর সংখ্যা ২৮৪ জন। এদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ১১৯ জন, নৌবাহিনীর পাঁচ জন, বিমানবাহিনীর ১০ জন ও পুলিশের ১৫০ জন রয়েছেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ বর্তমানে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় বাংলাদেশের ১৫৯ জন শান্তিরক্ষী মৃত্যুবরণ করেছেন। তারপরও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা-মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। তারা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনগণের সঙ্গে মিশে গেছেন। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ভূমিকায় প্রশংসিত হয়ে সিয়েরালিওন তাদের দেশের প্রধান ভাষা বাংলা করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সংবিধান অনুযায়ী করতে না পারায় দেশটির দ্বিতীয় ভাষা এখন বাংলা। ১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে অদ্যাবধি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর সর্বোচ্চ পেশাদারি মনোভাব, আনুগত্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। তাদের অনন্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে এবং আমাদের শান্তিরক্ষীরা শান্তিরক্ষা-মিশনে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোত্সর্গকারী আট বাংলাদেশিসহ বিশ্বের ৪৪টি দেশের ১২৯ জন শান্তিরক্ষীকে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল প্রদান করেছে জাতিসংঘ। নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ পদক দেওয়া হয়। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে বাংলাদেশের ৮ জন শান্তিরক্ষী রয়েছেন, যা একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ বাংলাদেশসহ ৪৪টি দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিদের হাতে স্ব স্ব দেশের মেডেল তুলে দেন। কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোত্সর্গকারী বাংলাদেশের আট জন শান্তিরক্ষী হলেন- মালিতে নিয়োজিত মিনুস্মা মিশনের ওয়ারেন্ট অফিসার আবদুল মো. হালিম, কঙ্গোতে নিয়োজিত মনুস্কো মিশনের ওয়ারেন্ট অফিসার মো. সাইফুল ইমাম ভূঁইয়া, সার্জেন্ট মো. জিয়াউর রহমান, সার্জেন্ট এমডি মোবারক হোসেন ও ল্যান্স কর্পোরাল মো. সাইফুল ইসলাম, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক-এ নিয়োজিত মিনুস্কা মিশনের ল্যান্স কর্পোরাল মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সার্জেন্ট মো. ইব্রাহীম এবং দক্ষিণ সুদানে নিয়োজিত আনমিস্ মিশনের ওয়াসারম্যান নুরুল আমিন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই মেডেল গ্রহণ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানটিতে আরো অংশগ্রহণ করেন মিশনের ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ছাদেকুজ্জামান।
সূত্র যুগান্তর
আপনার মতামত জানান