বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে বিনিয়োগ করবে ওরিক্স বায়োটেক
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি’-তে বায়োটেকনোলজি নিয়ে কাজ করবে ওরিক্স বায়োটেক লিমিটেড। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে ব্লক-২-এ ২৫ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে প্রতিষ্ঠানটি ৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে।
আজ মঙ্গলবার আইসিটি টাওয়ারের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সম্মেলন কক্ষে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল অনলাইনের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
অনুষ্ঠানে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে পুরো প্লান্টের বিষয়টি তুলে ধরে জানানো হয়, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগে নির্মিতব্য এই প্লান্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজারে বায়োটেক পণ্য সহজলভ্য হবে। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে এই প্লান্টে ২০০০ কর্মীর উচ্চ বেতনের চাকরির সংস্থান হবে। এটাই হবে ২০২১ সালের ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য একটি যোগ্য প্রকল্প। ওরিক্স বায়োটেক লিমিটেড শুরুতে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে।
উন্নত বিশ্বে (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীন, জাপান) বর্তমানে বায়ো-টেকনোলজির ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। মূলত হিউম্যান প্লাজমা থেকে বায়োটেক পণ্য উৎপাদিত হয়। এইচআইভি এইডস এবং ক্যানসার রোগের চিকিৎসায় এসব বায়োটেক ওষুধ এখন ব্যবহার হচ্ছে। ওরিক্স বায়োটেক লিমিটেড বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে বছরে ১২০০ টন প্লাজমা বিশ্লেষণে সক্ষম প্লান্ট নির্মাণ করতে চায়, যার সঙ্গে ২০টি প্লাজমা সংগ্রহ স্টেশন সংযুক্ত থাকবে। প্রতিষ্ঠানটি এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্যান্য উন্নত বিশ্বের মান বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজারে বায়োটেক পণ্য সহজলভ্য হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আইসিটি বিভাগ করোনা মোকাবেলায় যে ভূমিকা রেখেছে, তা দেশের সর্বস্তরে প্রশংসিত হয়েছে। করোনার সংক্রমণ রোধে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে আইসিটি বিভাগ। লাইভ করোনা টেস্ট, কভিড-১৯ ট্র্যাকার, টেলি মেডিসিন ও টেলিহেলথ, সহযোদ্ধা-প্লাজমা প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদি বহু উদ্যোগের সুফল পেয়েছে দেশবাসী। এর থেকেই একটি দেশের আইসিটি খাতের অগ্রগতির চিত্র সুস্পষ্ট।’
সভাপতির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘কালিয়াকৈরে অবস্থিত ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি’ দেশের প্রথম ও বৃহত্তম হাইটেক পার্ক। ২০১৪ সালে আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ সরেজমিনে এই পার্কটি পরিদর্শন করে পার্কের উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ৩৫৫ একর জমিতে স্থাপিত ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি’-তে বর্তমানে ৩৭টি কম্পানিকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে পাঁচটি কোম্পানি উৎপাদন শুরু করেছে। কম্পানিগুলো এই পার্কে মোবাইল ফোন এসেম্বলিং ও উৎপাদন, অপটিক্যাল কেবল, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ডাটা সেন্টার প্রভৃতি উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে। ইতিমধ্যে ৩২৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এবং প্রায় ১৩০০০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে হাইটেক পার্কগুলোতে ২৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সুদক্ষ নেতৃত্বে দেশের তরুণরা সোনার মানুষে পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশে তৈরি হয়েছে ১০ লাখ আইটি দক্ষ জনবল। সব ক্ষেত্রেই হচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। ফলে সব কাজই সম্পন্ন হচ্ছে সুষমভাবে। তারুণ্যের মেধা আর প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়েই উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’
সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, ‘সামিট টেকনোপলিসের বরাদ্দকৃত ২০ একর জমি এবং ভবনে দেশের প্রথম এবং বৃহত্তম বায়োটেক শিল্প খাতে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই বিনিয়োগ কার্যকর করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের বর্ণিল বছরে এটি অত্যন্ত সন্তোষজনক ব্যাপার যে, এই প্লাজমা ফ্রাকশানেশন প্ল্যান্টটি বাংলাদেশের উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।’
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, সামিট টেকনো পলিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজা খান।
ওরিক্স বায়োটেকের চেয়ারম্যান কাজী শাকিল ও ওরিক্স বায়োটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড বো অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে চুক্তি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
আপনার মতামত জানান