নারীদের যে অনন্য মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম
ইসলাম-পূর্ব জাহিলিয়াতের অন্ধকার যুগে নারীদের সঙ্গে চরম অমানবিক আচরণ করা হতো। ইসলাম তাদের সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত করে সর্বোচ্চ সম্মানে অধিষ্ঠিত করেছে। তাদের ব্যবহার করা হতো শুধুই ভোগের বস্তু হিসেবে। তাদেরকে পণ্যের মতো বিক্রি করা হতো। পাচার করে দেওয়া হতো দেশ থেকে দেশান্তরে। তাই সে যুগে কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়াকে অপমানের মনে করা হতো। সে যুগের বর্বর মানুষরা তাদের কন্যাসন্তানদের জীবন্ত পুঁতে দিত। কিন্তু ইসলাম এসে তাদের বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন জীবন্ত-প্রোথিতা কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল? (সুরা : তাকভীর, আয়াত : ৮-৯)
ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ সম্মানে অধিষ্ঠিত করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে, মানুষের মধ্যে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার হলেন মা। (বুখারি, হাদিস : ৫৯৭১)
শুধু তা-ই নয়, নারী যখন স্ত্রী, কন্যা বা বোন, তখনো তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসলাম অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান বা তিনজন বোন আছে, আর সে তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেছে, তাদের নিজের জন্য অসম্মানের কারণ মনে করেনি, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯১২)
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, তুমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে যা-ই ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে প্রদান করা হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও (প্রতিদান দেওয়া হবে)।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬)
কিন্তু দুঃখের বিষয়, বর্তমানে মানুষ ইসলাম ছেড়ে জাহিলি যুগের দিকে ফিরে যাচ্ছে। আলোর পথ ছেড়ে অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। মানুষ এতটাই নিকৃষ্ট হয়ে গেছে যে সামান্য কিছু অর্থের জন্য নারীদের পণ্য বানিয়ে ফেলতে দ্বিধা বোধ করে না। তারা সোনালি ভবিষ্যতের প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের বিক্রি করে দেয় ভিনদেশে। অথচ এভাবে স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করে দেওয়া জঘন্য অপরাধ। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘যে কিয়ামতের দিবসে আমি নিজে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হব।… (তার মধ্যে অন্যতম ব্যক্তি হলো) যে কোনো আজাদ মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করল।’…(বুখারি, হাদিস : ২২২৭)
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, পাচার হওয়া নারীদের তুলে দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক চক্রের হাতে, যারা পরে তাদের দেহব্যবসায় বাধ্য করে, কিংবা জিম্মি করে স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে।
মানুষ কতটা নিকৃষ্ট হলে এভাবে নারীদের জালিমের কবলে ঠেলে দিতে পারে! রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না এবং তাকে জালিমের হাতে সোপর্দও করবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ২২৮০)
মহান আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুন। এ ধরনের ঘৃণ্য কাজের বিরুদ্ধে জাতিকে সোচ্চার হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ
আপনার মতামত জানান