ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড-প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত

সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই’ এই প্রস্তাব করা হচ্ছে। আগামী ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাব তোলা হবে।

নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, সিলেটের এমসি কলেজে তুলে নিয়ে ধর্ষণসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যে সরকারের এ উদ্যোগের খবর এল।

মন্ত্রী বলেন, “বর্তমান আইনের সাজায় পরিবর্তন এনে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন সংশোধনের প্রস্তাব করা হবে।”

বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে দোষী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। এর পাশাপাশি দুই ক্ষেত্রেই অর্থ দণ্ডের বিধান আছে।

এ আইনের মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সাত দিন থেকে এক মাস এবং মামলা নিষ্পত্তির জন্য একশত আশি দিন (ছয় মাস) সময় বেঁধে দেওয়া থাকলেও বাসতে ওই সময়ের মধ্যে রায় দেওয়া সম্ভব হয় না।

তাছাড়া ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের এক একটি ঘটনা কিছু দিন পর পর সারা দেশকে নাড়া দিয়ে গেলেও এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তির নজির কম।

ধর্ষণের বেশিরভাগ মামলা বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় ধামা চাপা পড়ে যায়। তাছাড়া ঠিকমত ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়া, সামাজিক জড়তা, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপসহ নানা কারণে বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশে ৮৮৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ধর্ষণের পর মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের।

আর এই আট মাসে ধর্ষণচেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৯২ জন নারী এবং ৯ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন।

তবে অনেক অভিযোগ থানা পর্যন্ত না পৌঁছানোয় প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে অধিকারকর্মীদের ধারণা।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ বছরে ধর্ষণের ঘটনায় ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে মামলা হয়েছে ৪ হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে আসামির শাস্তি হয়েছে মাত্র ৬০টি ঘটনায়।

এসব কারণে ধর্ষণের অপরাধে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে বিচার ও রায় কার্যকর করার জন্য আইন সংশোধনের দাবি রয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের।

চলতি বছর জানুয়ারিতে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় এক রিট মামলায় রুল জারি করেছিল হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ।

ষোল বছর বা তার কম বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হলে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে আইন করতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছিল সেই রুলে। বিষয়টি এখনও নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের একের পর এক ঘটনায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন সম্পাদক মোহাম্মদ ফুয়াদ হোসেন। সেখানে ধর্ষণের দ্রুত বিচারে বিশেষ আদালত গঠন এবং ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবিতে সমর্থন জানিয়েছেন।

গত ৭ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এদের ছোটখাটো লঘু দণ্ড দিয়ে লাভ নেই। সর্বোচ্চ বিচারের যে দাবি উঠেছে, আমার মনে হয় এটা অযৌক্তিক নয়। এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে সকল রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনকে আপসহীন মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।”

আপনার মতামত জানান