ধনু নদী বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই

প্রকাশিত



খালিয়াজুরীর হাওরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধনু নদীর পানি আজ মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিপৎসীমার মাত্র ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছিল। পানির চাপ আর ঢেউয়ের ধাক্কায় ফসল রক্ষাবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। বাঁধের ভেতরের প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান হারানোর আতঙ্কে কৃষকেরা চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।


বাঁধকে টিকিয়ে রাখতে এখন তারা দিনরাত বাঁধ মেরামতের কাজে ব্যস্ত রয়েছে। আশঙ্কাজনকভাবে পানি বেড়ে যাওয়ায় অনেক কৃষক আধাপাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান, খালিয়াজুরী উপলোর নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম ও পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত হাওরে অবস্থান করে মেরামত কাজ তদারকি করেন।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা জানিয়েছেন, বাঁধের বাইরে থাকা তলিয়ে যাওয়া শতাধিক হেক্টর জমির আধাপাকা ধান আজ পর্যন্ত মাত্র ২৫ ভাগ কাটতে পেরেছে কৃষক। বাকি জমি পানিতে নিমজ্জিত। পানি না কমলে এসব জমির ফসল বিনষ্ট হয়ে যাবে।

আজ মঙ্গলবার হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, ডুবে যাওয়া আধাপাকা ধান কাটা মাড়াইয়ে কৃষকরা ব্যস্ত। ফসল রক্ষা বাঁধের কীর্তনখোলা এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অংশে স্থানীয় কৃষকেরা বাঁধ মেরামতে ব্যস্ত রয়েছে। কৃষকরা জানান, এই বোরো ফসল থেকেই তাদের সারা বছরের খাওয়ার ব্যবস্থা হয়। তা ছাড়া সন্তানের লেখাপড়া, চিকিৎসাসহ পরিবারের সব খরচ ধান বিক্রির আয় থেকে করতে হয়। এই ফসল এখন হুমকিতে থাকায় দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন তারা।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত বলেন, আমি বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থান করছি। বাঁধ মেরামত প্রকল্পের সদস্য ও এলাকাবাসীর সহায়তায় ঝুঁকিপূর্ণ অংশে মাটিভর্তি বস্তা ফেলে মেরামতের কাজ চলছে। তবে হাওরে পানিও বাড়ছে। আজ মঙ্গলবার সকালে ধনু নদীর পানি বিপৎসীমার মাত্র ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছিল।

খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, তলিয়ে যাওয়া ফসলের ২৫ ভাগ কাটতে পেরেছে কৃষক। ১-১২ দিন সময় পেলে বাঁধের ভেতরে থাকা প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।

আজ মঙ্গলবার সকালে বাঁধ মেরামতের কাজ পরিদর্শনকালে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মেরামতের কাজ চলছে। বাঁধ ভেঙে যাতে ফসলের ক্ষতি না হয় সে জন্য সার্বক্ষণিক তদারকি চলছে। সকলের সহযোগিতায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বাঁধ রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

গত কয়েকদিনে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার ধনু নদীঘেঁষা খালিয়াজুরী উপজেলার কয়েকটি হাওরের শতাধিক একর জমির আধাপাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়। খালিয়াজুরী উপজেলার কীর্তনখলা হাওর, বাদিয়ারচর, ডাকাতখালি, মনিজান, লেবরিয়া, হেমনগর, বাগানী ও নয়াখালসহ ধনু নদীঘেঁষা নিম্নাঞ্চলের এসব জমি ফসল রক্ষা বাঁধের পাউবোর নকশার বাইরে ছিল।

আপনার মতামত জানান