দেহ ও মনোরোগের মুক্তিতে শ্রেষ্ঠ আরোগ্য কোরআন
আল্লাহ মানুষকে যে স্বাভাবিক দৈহিক ও আত্মিক বৈশিষ্ট্য দান করেছেন তা অক্ষুণ্ন থাকলেই ব্যক্তিকে সুস্থ বলা যায়। এ দুটির কোনোটি নষ্ট হলেই ব্যক্তিকে অসুস্থ বলা হয়। অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থতার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। আল্লাহ পৃথিবীর সব রোগের আরোগ্য দান করেছেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রতিটি রোগের আরোগ্য আছে। অতএব যখন যথাযথ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, তখন আল্লাহর ইচ্ছায় রোগ ভালো হয়। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৬৩৪)
শ্রেষ্ঠ আরোগ্য কোরআন : মহান আল্লাহ পৃথিবীতে রোগের যত আরোগ্য দান করেছেন, তার মধ্যে কোরআনই শ্রেষ্ঠতর। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে উপদেশ ও তোমারে অন্তরে যা আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্য সুপথ ও রহমত। ’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৫৭)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবতীর্ণ করি কোরআন, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত। কিন্তু তা অবিচারকারীদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮২)
কোরআন কি শুধু অন্তরের আরোগ্য? : বেশির ভাগ আলেম মনে করেন, কোরআন শুধু অন্তরের আরোগ্য নয়; বরং তা দেহেরও আরোগ্য। কেননা আল্লাহ কোরআনের আরোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে দেহ ও মনকে আলাদা করেননি। তিনি ব্যাপাকার্থেই বলেছেন, ‘আমি অবতীর্ণ করি কোরআন, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত। কিন্তু তা অবিচারকারীদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮২)
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওজি (রহ.) বলেন, কোরআন দেহ ও মন, দুনিয়া ও আখিরাত সব কিছুর আরোগ্যস্বরূপ। প্রতিটি মানুষ কোরআনের আরোগ্য লাভের অধিকার রাখে। …যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর কোরআন বোঝার যোগ্যতা দান করেছেন, তারা কোরআনে শারীরিক ও মানসিক সব রোগের চিকিৎসার পদ্ধতি, রোগের কারণ ও তা থেকে বেঁচে থাকার উপায় খুঁজে পাবে। (জাদুল মাআদ : ৩/১৭৮)
অন্তরের চিকিৎসায় অদ্বিতীয় : মানুষের আত্মা ও মনের চিকিৎসায় কোরআন অদ্বিতীয়। আত্মার ব্যধিকেই কোরআন সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে। কোরআনের আত্মিক চিকিৎসা গ্রহণ করাকে আত্মশুদ্ধি এবং তা বর্জন করাকে আত্মাকে কলুষিত করা বলে। ইরশাদ হয়েছে, ‘শপথ মানুষের এবং তাঁর, যিনি তাকে সুঠাম করেছেন। অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও তার সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। সে-ই সফলকাম হবে, যে নিজেকে পবিত্র করবে এবং সে-ই ব্যর্থ হবে, যে নিজেকে কলুষাচ্ছন্ন করবে। ’ (সুরা শামস, আয়াত : ৭-১০)
প্রধান দুই ব্যাধির চিকিৎসা : মানুষের মনের প্রধান দুই ব্যাধি হলো—এক. ‘আমরাজুশ শুবহাত’ তথা সংশয়ের ব্যাধি। যখন মানুষের মনে সংশয়ের রোগ জন্ম নেয়, তখন তার যাপিতজীবনের সব শান্তি বিদায় নেয়।
দুই. আমরাজুশ শাহওয়াত তথা প্রবৃত্তির তাড়না। প্রবৃত্তির তাড়না মানুষের যাবতীয় অপরাধের মূল কারণ। কোরআন এই দুই ভয়াবহ ব্যাধির চিকিৎসা বাতলে দিয়ে বলেছে, ‘বলুন, হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি শয়তানের প্ররোচনা থেকে। হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার কাছে তাদের উপস্থিতি থেকে। ’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৯৭-৯৮)
দেহ-মনের সংযোগ : অসংখ্য আয়াত ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কোরআন মানবাত্মাকে পবিত্র, পরিশুদ্ধ, সুস্থ ও বরকতময় করে। আর আত্মার সুস্থতার মধ্যেই দেহের সুস্থতা নিহিত। সুতরাং যারা কোরআনকে আত্মার আরোগ্য মেনে নেয়, তাদের সামনে ‘কোরআন দেহের আরোগ্য’—এ কথা অস্বীকার করার অবকাশ থাকে না। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘যখন মানবাত্মা শক্তিশালী হয়, তখন মানুষের জীবনী শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সতেজ হয়। আর এটাই মানুষকে রোগ প্রতিরোধ করতে এবং তার শরীরে রোগের প্রকোপ হ্রাস করতে সাহায্য করে। ’ (জাদুল মাআদ : ৩/৬৬)
দৈহিক চিকিৎসা গ্রহণের প্রমাণ : একাধিক বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নবীজি (সা.) কোরআন দ্বারা মানুষের দৈহিক ব্যাধির চিকিৎসা করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরিবারবর্গের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি ‘মুআববিজাত’ (সুরা নাস ও ফালাক) পড়ে তাকে ফুঁক দিতেন। পরবর্তী সময়ে তিনি যখন মৃত্যুরোগে আক্রান্ত হলেন, তখন আমি তাকে ফুঁক দিতে লাগলাম এবং তাঁর-ই হাত দিয়ে তাঁর দেহটি মুছে দিতে লাগলাম। কেননা আমার হাতের তুলনায় তাঁর হাতটি ছিল অনেক বরকতপূর্ণ। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৬০৭)
বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত, সাহাবিদের একটি দল একবার সুরা ফাতিহা পাঠ করে এক গোত্রপ্রধানের চিকিৎসা করেন এবং বিনিময় গ্রহণ করেন। সেই সরদারকে সাপ বা বিচ্ছু দংশন করেছিল। তারা ফিরে এসে নবীজি (সা.)-এর কাছে ঘটনা বর্ণনা করলে তিনি তা অনুমোদন দেন এবং অর্জিত অর্থের অংশ গ্রহণ করেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩৪১৮)
পূর্ণ বিশ্বাসে মিলবে পরিপূর্ণ আরোগ্য : কোরআনের মাধ্যমে মানুষ দেহ-মনের পূর্ণাঙ্গ আরোগ্য লাভ করতে পারে। বিশেষত আত্মার ব্যাধির ক্ষেত্রে। কোরআন যে আরোগ্যকে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে তুলনা করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘এভাবে আমি তোমাদের প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি রুহ তথা আমার নির্দেশ; তুমি তো জানতে না কিতাব কী এবং ঈমান কী? পক্ষান্তরে আমি এটাকে করেছি আলো। যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথনির্দেশ করি। ’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত : ৫২)
কোরআনের এই আরোগ্য লাভের শর্ত হলো, ঈমানে পূর্ণতা। যার ঈমান যত পূর্ণ কোরআন তার জন্য তত বেশি রোগ প্রতিরোধক। যেমনটি আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি অবতীর্ণ করি কোরআন, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত। কিন্তু তা অবিচারকারীদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮২)
আল্লাহ সবাইকে কোরআন দ্বারা উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন
আপনার মতামত জানান