দুর্ধর্ষ ক্লোন সেনা বানাচ্ছে রাশিয়া

প্রকাশিত

এবার ভয়ংকর ও দুর্ধর্ষ ক্লোন সেনা তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রাশিয়া। ঠিক ‘ইউনিভার্সাল সোলজার’ সিনেমার সেনাবাহিনীর মতো। এটা সেনাদের এমন একটি দল যাদের হারানো প্রায় অসম্ভব। বাস্তবেও তেমনই এক অপরাজেয় বাহিনী তৈরি করতে যাচ্ছে রাশিয়া। অপ্রতিরোধ্য এ বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে প্রায় তিন হাজার বছর আগের এক যাযাবর গোষ্ঠীর দুর্ধর্ষ যোদ্ধাদের হুবহু নকল তথা ক্লোন করে।

রাশিয়ার সেনাবাহিনী বিশ্বের বৃহত্তম ও শক্তিশারী সেনাবাহিনীর অন্যতম। সেনা সংখ্যা ছাড়াও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সব সমরাস্ত্র, যুদ্ধের দক্ষতা ও সক্ষমতায় সেরা রুশ সেনাবাহিনী। তা স্বত্বেও দেশকে শত্রুমুক্ত রাখতে ও আগামী দিনের যুদ্ধের কথা মাথায় রেখে নতুন নতুন কৌশল ও পরিকল্পনা করছে দেশটির নেতারা। সম্প্রতি দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেনাবাহিনীকে আরও উন্নত করে গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে পুরোদমে কাজও শুরু করেছেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু। এক্ষেত্রে সের্গেই সোইগুর সর্বশেষ ও যুগান্তকরী আইডিয়া হচ্ছে, প্রাচীনকালের এক দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনীর পুরোটাই ক্লোন করে ফেলা। গত মাসেই রাশিয়ান জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটির এক বৈঠকে প্রথমবারের মতো বিষয়টি খোলাশা করেন পুতিনের ঘনিষ্ট সহচর হিসাবে পরিচিত সোইগু। বৈঠকে তিনি বলেন, তিন হাজার বছরের পুরানো যোদ্ধা জাতি ‘সিথিয়ান’দের মাধ্যমেই একেবারে নতুন দুর্ধর্ষ একটি সেনাবাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব। সিথিয়ানরা ছিল মূলত যাযাবর। এদের আদি নিবাস ছিল আধুনিককালের ইরান। খ্রিষ্টপূর্ব নবম শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত ইউরেশিয়া অঞ্চলে এসেছিল তারা। গড়ে তুলেছিল শক্তিশালী সামাজ্য, যা পরবর্তী কয়েক শতাব্দী ধরে টিকে ছিল। মহাপরাক্রমশালী সেই সিথিয়ান সাম্রাজ্যের যোদ্ধাদের দেহাবশেষ দুই দশক আগে সাইবেরিয়ার তুবা অঞ্চলে আবিষ্কার করেছে প্রত্নতত্ত্ববিদরা।

জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটির একটি অনুষ্ঠানে সের্গেই জানান, ওই যোদ্ধাদের দেহাবশেষ থেকে এমন কিছু জৈব কোষের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা তাদের ক্লোন বানানোর জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে। কিন্তু মানুষের ক্লোন বানানো কি আসলেই সম্ভব। তা-ও আবার কবর খুঁড়ে বের করা হাজার হাজার বছরের পুরানো দেহাবশেষ থেকে? এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাইবেরিয়ার যে অঞ্চলে সিথিয়ানস সেনাদের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে, সেখানে তাপমাত্রা অত্যন্ত কম। সারা বছরই সেখানকার মাটি ঠান্ডায় জমে থাকে। ফলে তিন হাজার বছরের পুরনো দেহ থেকেও কিছু জৈব অবশেষ পাওয়া সম্ভব যা ক্লোন তৈরির কাজে লাগতে পারে। তবে সমস্যা অন্য জায়গায়। মানুষের ক্লোন এখন পর্যন্ত তৈরিই করে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। অন্তত প্রকাশ্যে তেমন দাবি করেননি কেউই। এক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতাও রয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানান, সাধারণত ক্লোন তৈরির জন্য পুরনো কোষ থেকে নতুন কোষে নিউক্লিয়াস স্থানান্তর করার প্রয়োজন হয়। তার জন্য প্রথমে নতুন কোষের নিউক্লিয়াসটিকে সরাতে হয়। মানব কোষের দুটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রোটিনকে অক্ষত রেখে সম্পূর্ণ করতে হয় এই প্রক্রিয়া। কিন্তু সমস্যা হলো-এই দুই প্রোটিন নিউক্লিয়াসের এত কাছে থাকে যে, তাদের ক্ষতি না করে নিউক্লিয়াসটিকে সরানো যায় না। এ সমস্যার কারণেই আজ পর্যন্ত মানুষের ক্লোন তৈরি করা যায়নি। এ ছাড়াও মানুষের ক্লোন বানানো আইনত বৈধ নয়। সের্গেইয়ের প্রস্তাবের কথা ছড়িয়ে পড়ার পর তাই তা বিস্মিত করেছে বিজ্ঞানীদের।

অনেকে আবার প্রশ্ন তুলেছেন, যদি কোনোক্রমে রাশিয়া আইনি বাধা এবং বৈজ্ঞানিক প্রতিকূলতা কাটিয়েও ওঠে তার পরেও কি ওই নকল যোদ্ধাদের সেনাবাহিনীর স্বপ্ন পূরণ হবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর? সের্গেইয়ের ভাবনা অনুযায়ী যদি সব ঠিকঠাক চলে, সেক্ষেতেও অন্তত ২০ বছর সময় লাগবে এই সেনাবাহিনী তৈরি করতে।

যুগান্তর।

আপনার মতামত জানান