দিনমজুরের কাছ থেকে ইউএনও’র অনৈতিক সুবিধা, জুলুম, অভিযোগ

প্রকাশিত

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন এক দিনমজুর। এতে বেকায়দায় পড়ে যান তিনি। তখন গরিব মানুষটিকে বাগে আনার চেষ্টা করেও না পেরে ঘটনা সাজিয়ে তাঁকে জেলে পুরে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর সাহায্যের জন্য তাঁর পরিবারকে পাঠিয়েছেন টাকা আর চাল।

এই ইউএনওর নাম মো. ইয়াসিন। তিনি খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় কর্মরত। অভিযোগের বিষয়ে জানতে গত শনিবার মো. ইয়াসিনের মুঠোফোনে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে ফোন কেটে দেন। এরপর আবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএম দিয়ে কথা বলতে চাইলেও তিনি সাড়া দেননি।

লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার ময়ূরখীল গ্রামের বাসিন্দা আলী আহাম্মদ। দিনমজুরি করেই চলে তাঁর তিন সন্তানসহ পাঁচজন সদস্যের সংসার। গত ২১ জুন তিনি প্রধানমন্ত্রী ও জনপ্রশাসনসচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ডাকযোগে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে তিনি মুজিববর্ষ উপলক্ষে দরিদ্রদের জন্য ঘর নির্মাণ ও বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন ইউএনও ইয়াসিন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল চৌধুরীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে।

আলী আহাম্মদের ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শৃঙ্খলা অধিশাখা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসককে ১৫ দিনের মধ্যে ইউএনওর দুর্নীতির অভিযোগটি তদন্ত করতে বলা হয়। জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস ২৫ জুলাই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুল্লাকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ২৬ জুলাই নোটিশ ইস্যু করে ২৮ জুলাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাক্ষ্য-প্রমাণসহ (যদি থাকে) থাকতে বলা হয়। সেদিন অভিযোগকারী আলী আহাম্মদ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কাছে তথ্য-প্রমাণসহ বক্তব্য দেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সে অনুযায়ী প্রতিবেদন দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগকারী আলী আহাম্মদের অভিযোগ, তদন্ত অনুকূলে আনতে ইউএনও ইয়াসিন তাঁকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। এতেও কাজ না হওয়ায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইউএনও পরিকল্পিতভাবে একজন ঠিকাদারকে দিয়ে তাঁর বসতঘরের পাশে একটি ছোট টিলা থেকে মাটি কাটাতে শুরু করেন। ওই দিন সকালে আলী আহাম্মদকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে নিজের গাড়িতে করে থানায় নিয়ে যান ইউএনও। টিলা কাটার অভিযোগে রাতে নির্বাহী আদেশে তাঁকে এক মাসের জেল দেন ইউএনও। এক মাস জেল খেটে তিনি বাড়ি ফেরেন।

আলী আহাম্মদের স্ত্রী মোসাম্মৎ সেলিনা বেগম জানান, তাঁর স্বামীকে জেলে পাঠানোর পর তাঁকে একাধিকবার ফোন করেন ইউএনও। ওই দিন রাতে ইউএনও ফোনে তাঁকে জানান, তাঁর স্বামীর ছয় মাসের জেল হতো। কিন্তু তিনি এক মাসের জেল দিয়েছেন। ওই দিনই ইউএনও লোক দিয়ে তাঁর কাছে ১ হাজার টাকা পাঠান। পরে আরও ১ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি চাল পাঠান ইউএনও।

আলী আহাম্মদ বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় আমাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমার ওপর জুলুম করা হয়েছে।’

দিনমজুর আলী আহাম্মদের অভিযোগ ও তদন্তের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুল্লা কোনো কথা বলতে চাননি।

আপনার মতামত জানান