দাতা ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিনের হতাশার শুক্রবার
৭১ বছর বয়সী নাজিমুদ্দিনের জীবনে এমন শুক্রবার আর কোনোদিন আসেনি। ৩৬ বছর আগে দুর্ঘটনায় একটি পা হারিয়ে জীবন বাঁচাতে জীবিকা হিসেবে বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি। সপ্তাহের অন্যান্য দিন কোনোভাবে চলে গেলেও শুক্রবার দিনটির জন্য তার মতো অনেকেই উন্মুখ হয়ে থাকে। এ দিন তার মতো ভিক্ষুকদের আয়-রোজগার হয় একটু বেশি। কিন্তু করোনার প্রভাবে মধ্য রোজার এই শুক্রবারেও তাকে ফিরতে হয়েছে হতাশ হয়েই।
নাজিমুদ্দিনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার দেউল মোড়া গ্রামে। একসময় অন্যান্য মানুষের মতো স্বাভাবিক ছিল তার জীবনযাপন। তবে পৈতৃকসূত্রে মাথাগোঁজার একচিলতে ভিটে ছাড়া আয়-রোজগারের কোনো কিছুই ছিল না তার। বিয়ের পর পেশা হিসেবে বেছে নেয় সবজি বিক্রির কাজ। পার্শ্ববর্তী বগুড়া জেলার শেরপুরে সাইকেলে চড়ে চড়ে সবজি বিক্রি করে বেশ দু’পয়সা আয় করতেন। কিন্তু ১৯৮৪ সালের কোনো এক দুপুরে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে তিনি তার একটি পা হারান। দুমড়ে-মুচড়ে যায় তার সাইকেলটিও। এরপর খানিকটা সুস্থ হয়েই বেঁচে থাকার তাগিদে বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি। এভাবেই চলছে নাজিম উদ্দিনের দিনকাল। সপ্তাহের অন্যান্য দিন সাধারণত তিনি ভিক্ষা করতে না এলে ও প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার তিনি আসেন সিরাজগঞ্জ শহরে আসেন ভিক্ষা করতে।
জানালেন, প্রতি শুক্রবার চাকরিজীবীরা বাজার করতে আসায় লোকসমাগম বেশি হয়। তার ওপর জুমার নামাজে মুসল্লিদের উপস্থিতির কারণে তার মতো অনেকের আয়-রোজগার ভালো হয়। এ ছাড়া রোজার প্রতিটি শুক্রবারেও আয় আরো কিছুটা বেড়ে যায়। কিন্তু করোনাভাইরাস এর কারণে এই শুক্রবার তাকে হতাশ করেছে। সারাদিনে তার আয় হয়েছে ২৭ টাকা। অথচ বাড়ি থেকে শহরে আসতে তার খরচ হয়েছে ৩০ টাকা। বাড়িতে তার পরিবার-পরিজন আশায় রয়েছে শহর থেকে তিনি চাল-ডাল কিনে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি জানালেন, স্থানীয়ভাবে কোনো ত্রাণ সহায়তা না পেলেও কোনো কোনো প্রতিবেশী তাকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এই দুর্দিনে।
মধ্যদুপুরে ঘামে ভিজে ওঠা ক্লান্ত এই বৃদ্ধ ক্রাচে ভর দিযে যখন শহরের রাস্তায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন তখন তার ক্লান্ত চোখ-মুখ জানান দিচ্ছিল উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। আলাপচারিতার একপর্যায়ে তিনি জানালেন, বিগত বছরগুলোতে রোজার প্রতিটি শুক্রবার তিনি অন্তত ৫ থেকে ৭ কেজি চাল নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাড়তি থেকেছে দান হিসেবে পাওয়া ২-১টি মুরগি। কিন্তু এ বছর পেট চালানোই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। পথে-ঘাটে মানুষ নাই আমার মতো ব্যাবাকেরই কষ্ট। তবে এই হতাশার মাঝেও তার কণ্ঠে শোনা যায় আশার সুর। এইতো এখন দোকানপাট খুলছে মানুষ সমাগম বাড়ছে মসজিদের নামাজিরা যাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি কেটে যাবে তার দুর্দিন। তবে করোনাভাইরাস নিয়ে ভাববার খুব একটা সময় তার নেই।
আপনার মতামত জানান