তীব্র দাবদাহে ক্ষতির মুখে মাধবপুরের ৫ চা বাগান
হবিগঞ্জের মাধবপুরের পাঁচটি চা বাগান দীর্ঘ খরার কবলে পড়ে বিভিন্ন রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। চা পাতা উত্তোলনের ভরা মৌসুমে নতুন কুঁড়ি না আসায় চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এনিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
গত বছর এসময়ে যে পরিমাণ চা উৎপাদিত হয়েছিল এবছরের এসময়ে ২৩ শতাংশ চা কম উৎপাদিত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। প্রতিবছরই এপ্রিল মাসে দুটি পাতা একটি কুঁড়ির সবুজে ভরে যেত প্রতিটি চা বাগান। চা বাগানে চোখ পড়লেই দেখা যেত সবুজের হাতছানি। দেখা যেত বাগানজুড়ে দলবেঁধে নারী চা শ্রমিকরা পাতা উত্তোলন করতেন। কিন্তু এ বছর দীর্ঘদিন ধরে খরা থাকায় হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলায় তেলিয়াপাড়া, সুরমা, জগদীশপুর, বৈকণ্ঠপুর ও নোয়াপাড়া চা বাগানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবছর এপ্রিল মাসে উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে গেছে। খরায় চা বাগানে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন পোকার আক্রমণ। উঁচু ভূমিতে চাগাছ বেঁচে থাকার প্রধান উপাদান হচ্ছে বৃষ্টির পানি।
মহামারি করোনার মধ্যে দুই বছর ধরে বিক্রি ও দরপতন হওয়ায় চা বাগানগুলো এমনিতেই লোকসানের মধ্যে রয়েছে। তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাওয়ায় সবুজ চা পাতা চোখের সামনে মরে যাচ্ছে। অন্যান্য বছর খরা থাকলেও এমন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। চা বাগানে বালিযুক্ত দোআঁশ মাটি হওয়ায় মাটি গরম হয়ে চাগাছ মরে যাচ্ছে। অনুকূল আবহাওয়া কারণে চা বাগানে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ। শ্রমিকের মজুরিসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চা বাগান এখন টিকিয়ে রাখা কষ্টকর। এর পাশাপাশি এবছর সর্বনাশা খরায় চা বাগানের ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে বলে জানিয়েছেন জগদীশপুর চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক সনদ কুমার দত্ত।
সুরমা চা বাগানের ব্যবস্থাপক আবুল কাসেম বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে চা শিল্পে অনেক সম্ভাবনা ও ঐতিহ্য ছিল। অনেক প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে চা বাগানগুলো টিকে রযেছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কিছু সমস্যার কারণে চা বাগানের ভবিষ্যৎ এখন ভালো নয়। দীর্ঘ এ পরিস্থিতিতে গত বছরের তুলনায় এবছর উৎপাদন অনেক কমে গেছে। চাশিল্প প্রতিযোগিতার বাজারে এমনই টিকে থাকা কঠিন। তার ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরার কারণে এখন লোকসানের মধ্যে পড়তে হবে। দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে চায়ের দরপতন হওয়ার কারণে চা বাগানগুলো এমনিতেই লোকসানের মধ্যে আছে। করোনার সময় গত বছর চায়ের বাজার সংকোচিত হওয়ার কারণে চা বাগানগুলো ক্ষতির মুখে পড়ে। এর মূল কারণ হচ্ছে বৃষ্টিপাতের অভাবে চাগাছে নতুন পাতা নেই। কিন্তু বাগানগুলোতে শ্রমিকের মজুরি, আবাসন ও চিকিৎসাসহ অন্যান্য খরচ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় একসময় লোকসানের ঘানি টানতে টানতে চা বাগান বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ
আপনার মতামত জানান