তালেবানের আফগানিস্তানে শরিয়া শাসন
ফের নব্বই দশকে আফগানরা
সরকারি বাহিনীকে টেক্কা দিয়ে আফগানিস্তানের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে তালেবানরা। এবার নিজেদের দখল করা অঞ্চলগুলোতে শরিয়াহ শাসন চালু করেছে গোষ্ঠীটি।
উত্তরপূর্ব প্রদেশে দখল করা অঞ্চলগুলোতে বৃহস্পতিবার থেকে নতুন আইন চালু করেছে তালেবান। ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক এ আইনের ধারা অনুযায়ী বিয়ের দেনমোহর ও যৌতুক সংক্রান্ত বিধিনিষেধও জারি করা হয়েছে।
সে হিসাবে বিধিবিধান জারির ক্ষেত্রে ৯০ দশকের শরিয়াহ শাসনের দিকেই প্রত্যাবর্তন করল তালেবান। এর আগে ডেইলি টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছিল, গত সপ্তাহে খালিফা নামে পরিচিত প্রভাবশালী তালেবান নেতা সিরাজউদ্দিন হাক্কানি দখলকৃত জেলাগুলোতে তাদের নিজস্ব আইন চালুর তাগিদ দেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা আগেই সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, ‘মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট প্রত্যাহারের পর আফগান নারীদের অধিকার হুমকির মুখে পড়বে। এই কয়বছরে তাদের যতটুকু অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তালেবানরা পুনরায় ক্ষমতায় এলে ঠিক ততটুকুই পেছনে পড়বেন তারা। মূলত সেদিকেই এগোচ্ছে দেশটি।
গত সপ্তাহ থেকেই অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড, চুরির দায়ে হাত কর্তন, নারীদের একা ঘর থেকে বের হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা এবং পুরুষদের বাধ্যতামূলক দাড়ি রাখার বিধান চালু করেছে তালেবানরা। চলতি মাসের শুরুতেই তালেবানরা আফগানিস্তানের ৩৫টি প্রদেশের ৪২১টি জেলার মধ্যে ১৫০টির মতো জেলা দখলে নিয়েছে। আরও শতাধিক জেলায় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তাদের যুদ্ধ চলছে এবং ধারণা করা হচ্ছে শিগগিরই ওই জেলাগুলোও আয়ত্তে আনতে সমর্থ হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার তারা সর্বশেষ কাপিসা প্রদেশের তাগাব জেলা দখল করে নিয়েছে। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের তাখার জেলার সিভিল সোসাইটি কর্মী মেরাজউদ্দিন শরীফ বলেন, ‘তালেবানদের মূল সমস্যা শুধু শরিয়াহভিত্তিক আইনই নয়, তারা আসলে বিনা-প্রমাণে বিচার কাজ চালায়।’ যদিও এইরকম ঘটনা ঘটটে শোনা যায়নি এখনও।
তালেবানরা অতীতে ইসলামি বিধান চাপিয়ে দিয়েছিল আফগান নারীদের ওপর। সেসময় তারা মেয়েদের স্কুলে যেতে দিত না, নারীদের বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। পুরুষ সঙ্গী ছাড়া তারা বাড়ির বাইরে কোথাও যেতে পারবে না। এমনকি বিধান লঙ্ঘনকারীদের তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা করতো তালেবান ধর্মীয় পুলিশ।
তরিকার প্রাদেশিক কাউন্সিলের সদস্যরা বলেছেন, তালেবানদের দ্বারা দখলকৃত অঞ্চলের বাসিন্দাদের খাবারের জন্য অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
তখার প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ আজম আফজালি বলেছেন, ‘সেখানকার নাগরিকরা দৈনন্দিন পরিষেবাগুলো থেকে বঞ্চিত। ক্লিনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি বন্ধ রয়েছে।’
তাখারের গভর্নর আবদুল্লাহ কারলুক জানিয়েছেন তালেবানদের আক্রমণে সরকারি ভবনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তালেবানের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলোতে নাগরিক পরিষেবাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারা সরকারের সবকিছু লুট করে নিয়েছে।’ কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে এরকম কোনো তথ্যর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
সূত্রঃ যুগান্তর।
আপনার মতামত জানান