জাকিরের অবুঝ শিশুটি বাবার কোল খুঁজছে

প্রকাশিত
নিহত জাকির হোসেনের অবুঝ শিশু জাফরিন

 

ডেইলি সোনারগাঁ >>
সাত মাস বয়সের জাফরিনের দিকে তাকালেই সবার চোখ দিয়ে অজরে অ¤্রু গড়িয়ে পড়ছে। জাফরিনের বাবা জাকির হোসেন এলাকার সবচে বিনয়ী হিসেবে পরিচিত। অবুঝ শিশুটি বাবার মতো যাকে দেখছে তার কোলে যেতে কাঁদছে। তার কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। শিশু সন্তান ও নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাব বার গুমড়ে কেঁদে কেঁদে জ্ঞান হারাচ্ছেন অবুঝ শিশু জাফরিনের মা। আপন চাচাত ভাইয়েরা কতটা হিং¯্র জানোয়ার হতে পারে তা নিস্পাপ জাফরিনের চোখের দিকে তাকালেই অনুভব করা যায়।

নিহত জাকির হোসেন

নিহত জাকির হোসেন

গতকাল রবিবার রাত সাড়ে দশটায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের আনন্দবাজার আমিরাবাদ এলাকায় মেঘনা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন ও এ্যাডভান্স ফিড কম্পানীর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চাচাত ভাইদের সংঘর্ষে জাকির হোসেন (৩২) নামে নিরিহ এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। সংষর্ঘে উভয় পক্ষের আরো ৫ জন আহত হয়। মারাত্মক আহত আল আমিন নামের আরেক যুবকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীরা জানান, স্থানীয় যুবলীগ নেতা নবী হোসেন তার ভাই নজরুল ও স্থানীয় সাবেক মেম্বার আইয়ুব আলীর ছেলে সিরাজ দীর্ঘদিন যাবত মেঘনা নদী থেকে অবৈধবাবে বালু উত্তোলন করে আসছিল। প্রতিপক্ষ স্থানীয় মহিলা মেম্বার আনোয়ারার ছেলে আমির হোসেন, আল আমিন একসময় বালু সন্ত্রাসের সাথে জড়িত থাকলেও এলাকাবাসীর চাপে বালু কাটা বন্ধ করে বালু সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে গ্রামবাসীকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হন। গতকাল রাতে নবী হোসেনের একটি ড্রেজার স্থানীয় টেকপাড়ার মাছের ঝোপের কাছে বালু উত্তোলন করলে তারা বাঁধা প্রদান করেন। এতে মেঘনা নদীতে প্রথম দফায় সংঘর্ষ হয়।
পরে নবী হোসেন,নজরুল ও সিরাজ বাড়িতে এসে নবী হোসেনের শেলক বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ঈসমাইল হোসেনের ছেলে বালুসন্ত্রাসী রকিগ্রুপ এবং সিরাজের শেলক আক্তার, নুরু ও চাচা শ্বশুড় বোরহানের নেতৃত্বে দুটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীগ্রুপ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমিরাবাদ এলাকায় বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়।

এ সময় নবী হোসেন বিদেশী ব্যান্ডের বিয়ার ও নেশা জাতিয় দ্রব্য পান করে তার ঘরে বসে হামলার প্রস্তুতি নেয়। পরে ১০/১২ জন একত্রিত হয়ে আমির হোসেন ও আল আমিনকে হত্যার উদ্যেশে তাদের বাড়িতে যায়। উল্লেখ্য যে, আমির হোসেন, নবী হোসেন নিহত জাকির হোসেন সম্পর্কে আপন চাচাত ভাই। এ সময় জাকির সিরাজকে থামিয়ে সকালে এলাকার মুরব্বীদের নিয়ে ঘটনার মিমাংসার অনুরোধ জানাতেই জাকিরকে টেটা, বল্লম, রাম দা, চাপাতি ও চায়নিজ কুঠার দিয়ে এলোপাতারি কুপাতে থাকে। তার ডাক চিৎকার শুনে আমির হোসেন, আল আমিন ও আবু হানিফরা বাঁচাতে এলে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা তিনদিক থেকে তাদের আক্রমন করে। ঘটনাস্থলেই জাকির হোসেন নিহত হন। এ গোলাগোলির ঘটনাও ঘটে।

সন্ত্রাসীরা আমির হোসেনের ছোট ভাই আল-আমিন (৩৭), আবু হানিফ (৩১) ওপর হামলা চালায় ও টেঁটাবিদ্ধ করে। পাল্টা হামলায় সিরাজ মিয়া (৩৭) আহত হন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পোস্টমর্টেম শেষে জাকিরের লাশ তখনো পৌঁছায়নি বাড়িতে। তার ৭ মাস বয়সি বাচ্চা কোলে নিয়ে আহাজারি করছেন তার স্ত্রী। দুই বছর আগে বিয়ে করেছেন জাকির। সাত মাস আগে একটি সন্তানের বাবা হন তিনি। ফুটফুটে শিশুটির নাম জাফরিন।

সন্তানকে কোলে নিয়ে আদর করার জন্য কিছুদিন সুযোগ পেলেও বাবা ডাক শুনতে পারলেন না জাকির। সন্ত্রাসীদের ভয়ঙ্কর থাবায় বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হলো জাফরিন।তার এ কষ্টই যেন নির্বাক করে দিয়েছে পুরো গ্রামবাসীকে। ছোট ভাইয়ের মেয়েকে কোলে নিয়ে বসলেও কোন কথাই যেন বের হচ্ছিল না আমজাদ হোসেনের।

জাকিরের স্ত্রীর আহজারি সকলের চোখের পানি টলটল করছে। তিনি স্বামী হত্যার বিচার দাবী করে বলছেন‘আমার সন্তান বাবা ডাকবে কাকে। সে কোথায় পাবে বাবা। তাকে কেন তোরা এতিম করলি। আমার স্বামীর কি অপরাধ।’

ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার মতামত জানান