চাকরির কথা বলে বন্ধুকে হত্যা, গ্রেপ্তার ১

প্রকাশিত

চাকরির কথা বলে বন্ধুকে হত্যা ও মুখমণ্ডল পুড়িয়ে দেওয়ার রহস্য উম্মোচন করেছে শিবচর থানা পুলিশ। রেজাউল করিম নামে এক যুবককে নির্মমভাবে হত্যার পর মূল কারণ অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। ঘটনার ১ মাস ২৬ দিন পর সোমবার এমদাদুল মুন্সী নামক এক খুনিকে কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

শিবচর থানার পুলিশ জানায়, বগুড়া সদর উপজেলার চকসুত্রাপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. রেজাউল করিম (৪০) ও কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার চর আমলা গ্রামের সরোয়ার হোসেনের ছেলে রোলাস মালিথা রনি (৪০) কর্মসূত্রে কয়েক বছর আগে নেপাল থাকতো। সেখান থেকেই বন্ধুত্ব। আড়াই বছর আগে দেশে আসার পরও তাদের যোগাযোগ ছিল।

২০ হাজার টাকার বিনিময়ে রেজাউলকে পদ্মা সেতুর প্রকল্পে কাজ দেয়ার কথা বলে রনি তাকে শিবচরে আসতে বলে। গত ১০ সেপ্টেম্বর রেজাউল শিবচরের মাদবরচর আসেন। রনি তার সহযোগী এমদাদ মুন্সীকে (২৩) প্রকল্পের বস্ সাজিয়ে রেজাউলকে নিয়ে রাতে শিবচরের মাদবরচরের কালাই হাজী কান্দি একটি নির্জন এলাকার পরিত্যক্ত ঘরের কাছে নিয়ে যায়।

রাত গভীর হলে মোবাইলে কথা বলার অভিনয় করে সরে গিয়ে রেজাউলকে পেছন থেকে গলায় ফাঁস দেয়। রেজাউল ছোটাছুটি করলে ২ জনে মিলে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর এমদাদের গোংড়ানোর কন্ঠ নকল করে রেজাউলের ছবি তুলে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। কিন্তু দরিদ্র পরিবার টাকা দিতে অসমর্থ্য হয়।

এরপর ২ ঘাতক সটকে পড়ে। গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কালাই হাজী কান্দি গ্রামের টিনসেডের ওই পরিত্যক্ত ঘর থেকে দূর্গন্ধ পেয়ে শিবচর থানা পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে শিবচর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হাত পা বাঁধা ও মুখমণ্ডল দাহ্য পদার্থ দিয়ে ঝলসানো অবস্থায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে রেজাউলের লাশ উদ্ধার করে।

পরে শিবচর থানা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে হত্যার রহস্য উদঘাটনে নামে। শিবচর থানার এসআই সঞ্জীব জোয়াদ্দারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সোমবার ঢাকার কেরানীগঞ্জের কবুতরপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে এমদাদুল হক মুন্সিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত এমদাদুল পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। মঙ্গলবার তাকে মাদারীপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত এমদাদুল হক মুন্সি বলেন, ‘রোলাস মালিথা রনি পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ দেওয়ার কথা বলে তার পূর্ব পরিচিত রেজাউলকে বগুড়া থেকে শিবচরে ডেকে আনে। পরে পরিত্যক্ত ঘরে রেজাউলকে নিয়ে আমরা দুজন মিলে তার গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলি।

পরে রনি রেজাউলের ছবি তুলে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে অনেক টাকা মুক্তিপন দাবি করে। তার পরিবারের লোকজন কথা বলতে চাইলে মোবাইলে পরিচয় গোপন করে আমি রেজাউল সেজে কথা বলি। আমরা রেজাউলকে হত্যার পরপরই কেরোসিন ঢেলে লাশের মুখমণ্ডল পুড়িয়ে পালিয়ে যাই।’

শিবচর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিরাজ হোসেন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় খুনের ঘটনা উদঘাটন করি ও খুনের সাথে জড়িত এমদাদুলকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করি। এমদাদুলের স্বীকারোক্তি মোতাবেক ঘটনাস্থলের পাশের একটি পাটক্ষেত থেকে নিহত রেজাউলের ব্যাগ ও জামা-কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ডের সাথে গ্রেপ্তাকৃত এমদাদুল সরাসরি জড়িত ছিল বলে স্বীকার করেছে। অপর আসামি রোলাস মালিথা রনিকে ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’

আপনার মতামত জানান