ঘোষনা ছাড়াই স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলন সমাপ্ত, পকেট কমিটির আশঙ্কা

প্রকাশিত



বহুনেতায় বিভক্ত সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগকে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতারাও যেন বায়োস্কোপ বন্দী করে রাখতে চাচ্ছেন। নানা বিতর্কে বির্তকিত সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। তবে এ বিতর্কের মূলে কাজ করছে মাইনাস প্লাস ফর্মূলা। শিল্পাঞ্চলখ্যাত সোনারগাঁয়ে কাকে বাদ দিয়ে কে নেতা হবে এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে দীর্ঘদিন যাবত।

বঙ্গবন্ধু কিংবা দলীয় আর্দশ বাদ দিয়ে ব্যক্তি সুবিধা নিতে ভাই লীগে বিশ্বাসী সোনারগাঁয়ের মুষ্টিমেয় নেতারা। বিতর্কের শেষ পেরেক মেরে সমাপ্ত হলো সোনারগাঁ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। দীর্ঘ প্রায় ১ বছর ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলনের পর বহু কাঙ্খিত এ সম্মেলনে সভাপতি, সাধারন সম্পাদকের নাম ঘোষনা ছাড়াই সমাপ্তি ঘোষনায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা পকেট কমিটির আশঙ্কা করছেন। সোনারগাঁয়ের সাধারন মানুষের ধারনা রাজনীতি কিংবা ইমেজ নয় পদপদবী পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে টাকা। জাতীয় পার্টির নেতা থেকে রাতারাতি উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হওয়ার পর সবাই এখন বিশ্বাস করেন সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে টাকাই সব।

সোনারগাঁয়ের তৃণমূল কর্মীরা জানান, দীর্ঘ ২৩ বছর পর অনেক নাটকীয়তার পর প্রথমে ৮ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির ঘোষনা দেন। পরে আন্দোলন সংগ্রামের পর সে কমিটিকে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে বর্ধিত করা হয়। পরে ইউনিয়নে ইউনিয়নে কর্মী সম্মেলন করে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করার ঘোষনা দেন উপজেলা আওয়ামী লীগ। ৩ সেপ্টেম্বর ২৫ বছর পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে মীর্জা আজম এমপি সভাপতি, সাধারন সম্পাদকের নাম ঘোষনা করেন। সাথে সহসভাপতির নাম ঘোষনা করায় অনেকেই আপত্তি জানান। তারা বলেন, সোনারগাঁ ছাড়া কোথাও সভাপতি, সেক্রেটারির নাম ছাড়া সহসভাপতির নাম ঘোষনা করেছে এমন নজির নেই।

এরপর শুরু হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের চমকবাজির প্রস্তাবিত কমিটি গঠন। প্রস্তাবিত কমিটি কয়েকবার বিয়োজন সংযোজন করে বিরাট আয়োজনে পরিচিতি সভা করেন। যা রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রস্তাবিত কমিটির পরিচিতি সভা সোনারগাঁয়েই প্রথম। ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে ৭১ জনের নাম দিয়েই প্রস্তাবিত কমিটি গঠন করে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। পরবর্তীতে জেলা কমিটি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি থেকে ১৮ জন নেতার নাম বাদ দিয়ে রহস্যজনক কারনে তাদের পছন্দের ১৮ জনের নাম অন্তভূক্ত করেন। রাজনৈতিক শিষ্টাচার বর্হিভূত এ কমিটিকে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সাধারন সম্পাদক সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত প্রত্যাখ্যান করেন। জেলা আওয়ামী লীগ অন্য দলের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগের কমিটিতে অন্তভুক্ত করে তৃণমূল ত্যাগী নেতাদের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে বলে দাবী রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও উঠে আসে। উপজেলা আওয়ামী লীগ তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ করেন।

অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবকলীগের বিরুদ্ধে শুরুতেই পদ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আজ কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াই শেষ হওয়া সোনারগাঁ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির নাম ঘোষনা না করে সে সন্দেহকে আরো জোরদার করা হয়েছে বলে জানান অনেক নেতাকর্মী। অনেকেরই প্রশ্ন তাহলে কি, আওয়ামীলীগের মোতই পকেট কমিটি হতে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকলীগের।

তবে সম্মেলন শেষে সকল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের বায়োডাটা সংগ্রহ করে পরে কমিটি ঘোষনা করবেন বলে জানান প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন। নেতাকর্মীদের প্রশ্ন, তাহলে দীর্ঘ এক বছর ধরে যে ইউনিয়ন সম্মেলন হলো তার ফলাফল কি?

এদিকে সম্মেলনে আসা কর্মীরা জানান, তারা মনে করেছিলেন যেভাবে ঢাকঢোল পিটিয়ে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ইউনিয়নে কর্মী সম্মেলন করা হয়েছে সে হিসেবে মনে করেছিলাম আজকের সম্মেলনে অনেক চমক থাকবে কিন্তু চমক না থাকলে আতঙ্গ আর হতাশা তো আছে।

সম্মেলনে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি পদে সামছুজ্জামান সামসু, ফারুক ওমর, নেকবর হোসেন নাহিদ, আনিসুর রহমান, মামুন আহমেদ রাশেদসহ ৫জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে মাসুম আহমেদ ও নাজমুল খাঁন শান্ত সহ ২জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে সম্মেলনে কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। পরে দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটির ঘোষণা করা হবে।

সোনারগাঁ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ নেকবর হোসেন নাহিদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন। সম্মেলনে উদ্ধোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁয়ের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সার হাসনাত, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সায়েম, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, জনশক্তি ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য জাকির হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী মুস্তাফিজুর রহমান মাসুম, ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী আহমেদ।এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু, কাচঁপুর ইঊনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ ওমর, জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির, বৈদ্যের বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন সরকার, আওয়ামীলীগ নেত্রী নাসরিন সুলতানা ঝরা, সোনারগাঁ যুবলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু সাবেক চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন সাবু প্রমূখ ।

আপনার মতামত জানান