গ্রামবাসীর আন্দোলনকে পুঁজি করে বালুউত্তোলনে ঐক্যবদ্ধ হাশেম-জাকারিয়া,
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ ও গ্রামের ভাঙ্গন ঠেকাতে নুনেরটেক গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা নিরীহ গ্রামবাসীদের নিয়ে (১৯ নভেম্বর) আন্দোলন করে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এবার বালু উত্তোলনকারীদের নিয়ে গোপন বৈঠক করে বালু উত্তোলন করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।
গত (১৯ নভেম্বর) বালু উত্তোলনকারীদের প্রতিহত করতে গিয়ে হামলার স্বীকার হন গ্রামবাসীরা। এ ঘটনায় বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ৬ জনের নামে সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা হয়েছে। পরে আবারো অবৈধ বালু উত্তোলন শুরু করতে গোপন বৈঠক করে ঐক্যবদ্ধ হন বালু সন্ত্রাসীরা ।
পুলিশ ও এলাকাবাসীরা জানান, উপজেলার বারদী ইউনিয়নের মেঘনা নদীর নুনেরটেক রগুনারচর এলাকায় পার্শ্ববর্তী কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ সরকারের সহযোগী মানিক মিয়া, মনোয়ার হোসেন মনা, শাহপরান, আনোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীর ও মোশারফ দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ২০-২৫টি ড্রেজারের মাধ্যমে লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে নুরেরটেক এলাকার রঘুনারচর এলাকায় নতুন করে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হচ্ছে।
গত (১৯ নভেম্বর) মঙ্গলবার ভোরে ড্রেজারের মাধ্যমে নুনেরটেক এলাকায় বালু উত্তোলন করতে গেলে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বালু সন্ত্রাসীরা আগ্নোয়াস্ত্র, টেঁটা, বল্লম, লাঠিসোটা ও ইটপাটকেলসহ আরো লোকজন নিয়ে পুনরায় বালু উত্তোলন করতে আসে। পরে গ্রামবাসী ধাওয়া করতে গেলে বালু সন্ত্রাসীদের ছোড়া টেঁটায় নুনেরটেক রঘুনার চর গ্রামের ইমাম উদ্দিনের ছেলে দিলবর হোসেন সহ ১০ জন আহত হয়। পরে সোনারগাঁ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় এমভি মাতাব্বর ড্রেজিং, মা বাবার দোয়া, এমভি জিন্নাত ও এশিয়া সুপার নামের ৪ ড্রেজার আটক করে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় রগুনারচর গ্রামবাসীর পক্ষে আহাম্মদ আলী বাদি হয়ে মৈইশার চর গ্রামের চেরাগ আলীর ছেলে মানিক ও মনা, রশিদের ছেলে জাহাঙ্গীর ও ফারুক, আব্দুর রবের ছেলে লিল মিয়া ,রফিক মিয়ার ছেলে আজিজুল ইসলামকে আসামী করে একটি মামলা করেন।
এ দিকে বালু উত্তোলন প্রতিহত করতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে আন্দোলনে নেতৃত্বে দেওয়া নুনেরটেক গ্রামের জাকারিয়া ভুইয়া, আবুল হাসেম, আব্দুল লতিফ আবারো বালু উত্তোলন শুরুর পায়তারা করছে। তারা চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা নলচর গ্রামের সানা উল্লাহ সহ ১০/১২ জন নেতা বালু খেকো লতিফ চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে সোনারগাঁয়ের বারদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহিরুল হক এর ভাই তাজুল মেম্বারের বাড়িতে বসে গোপন বৈঠক করে বালু উত্তোলন করতে ঐক্যবদ্ধ হন।
বৈঠকের পরের দিন থেকে আবারো ২৫ থেকে ৩০টি ড্রেজার দিয়ে চলছে মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। ফলে রগুনার চর গ্রাম নতুন করে ভাংগনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে আবারো নুনেরটেক গ্রামের নেতাদের কাছে বলি হলেন গ্রামবাসীরা।
বার বার নিরীহ গ্রামবাসীদের দিয়ে আন্দোলন করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা এসব লোভীদের ব্যাপারে নুনেরটেক গ্রামবাসী অতিষ্ঠ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, এরা নুনেরটেকের মীর জাফর। তারা মায়ের (নুনেরটেকের মাটি) মাংস বিক্রি করে করে টাকা কামিয়ে রাতারাতি কোটিপতি হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে অসহায় গ্রামবাসীদের মিথ্যা মামলা হামলা দিয়ে হয়রানি করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সোনারগাঁ থানার এস আই আবুল কালাম আজাদ জানান, নুনেরটেকের শতশত মানুষের চোখের জল থামাতে এবং ভাঙ্গনরোধে বালু উত্তোলনকারীদের প্রতিহত করা হবে। সরকার সন্ত্রাস, দুর্নীতিবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন। আমরা জীবন দিয়ে হলেও সরকার ঘোষিত দুর্নীতিমুক্ত দেশে গড়তে যুদ্ধ করে যাব।
আপনার মতামত জানান