কক্সবাজারে বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত কক্সবাজার জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম সিকদার মারা গেছেন। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি, পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তারও করেনি। এদিকে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শহরতলির লিংক রোড স্টেশন এলাকা অবরোধ করে স্থানীয় লোকজন।
এ ছাড়া ইউপি নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ, হামলা এবং নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। চার স্থানে সংঘর্ষ ও হামলায় অন্তত ৪৬ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে মাগুরায় এক সদস্য (মেম্বার) প্রার্থীকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তিন স্থানে নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
কক্সবাজার : শহরতলির লিংক রোডে গতকাল রবিবার দুপুরে জোহর নামাজের সময় জহিরুলের মৃত্যুর খবর ঘোষণা করা হয়। নামাজ শেষে নিহতের স্বজন, সমর্থকরা রাস্তায় নেমে আসে। মুহূর্তে সড়কে কয়েক শ নেতাকর্মী জড়ো হন। তাঁরা রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। গুঁড়ি ও টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করেন। স্থানটি শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে হলেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ পথের মোড়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় কক্সবাজার শহরে যান চলাচল। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করা ছিল। তবে কেউ আহত হয়নি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। সড়কে ধর্মঘট থাকায় কোনো দৃশ্যমান ক্ষয়ক্ষতি দেখা যায়নি। জহিরুলের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত রাস্তা থেকে সরবেন না বলে জানিয়েছেন অবরোধকারীরা।
স্বজনরা জানায়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুর পৌনে ১টার দিকে জহিরুল মারা যান। তাঁর গুলিবিদ্ধ ভাই এবং ঝিলংজা ইউনিয়নের মেম্বার প্রার্থী কুদরত উল্লাহ সিকদারের শারীরিক অবস্থাও সংকটাপন্ন।
গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের লিংক রোডে তাঁর ছোট ভাই ইউপি মেম্বার কুদরত উল্লাহ সিকদারের নির্বাচনী অফিসে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসীর গুলিতে আহত হন দুই ভাই। কুদরত আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দুই ভাই নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকাকালে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল নিয়ে এসে পর পর কয়েক রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। এ সময় দুই ভাই একসঙ্গে গুলিবিদ্ধ হন। দুই ভাইকে শুক্রবার রাতেই প্রথমে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
জহিরুলের স্বজনরা অভিযোগ করে, ঝিলংজা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হামলায় অংশ নেয়।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি শেখ মুনির উল গিয়াস জানান, এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মামলা হয়নি।
পটুয়াখালী : সদর উপজেলার মরিচবুনিয়া ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুম মৃধা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কাদের খানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছে। গতকাল সকালে খাসেরহাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
মাগুরা : সদর উপজেলার গোপালগ্রাম ইউপি নির্বাচনে সদস্য প্রার্থী সিরাজুল ইসলামকে (৫৫) গত শনিবার রাতে কুপিয়ে জখম করা হয়। শিয়ালজুড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সিরাজুল মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অভিযোগ, আরেক সদস্য প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম ও তাঁর লোকজন এ হামলা চালায়। এ ঘটনায় গতকাল মাগুরা সদর থানায় মামলা হয়েছে।
ভোলা : দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউপিতে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ দুই পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে নির্বাচনী অফিস। গত শনিবার রাতে ২ নম্বর ওয়ার্ডের কেরানী বাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটা করে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। দৌলতখান থানার ওসি বজলার রহমান জানান, উভয় পক্ষের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ময়মনসিংহ : ফুলবাড়িয়ার কালাদহ ইউপির শুশুতি বাজারে গতকাল দুপুরে নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. নজরুল ইসলামের পাঁচ কর্মী-সমর্থক হামলায় আহত হয়। নজরুল অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থী মো. ইমান আলী মাস্টারের ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে এ হামলা চালান। এ ঘটনায় তিনি রিটার্নিং অফিসার বরাবর অভিযোগ করেছেন।
কুড়িগ্রাম : সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউপিতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক ব্যাপারী অপহৃত হয়েছেন—এই গুজবে তাঁর কর্মী-সমর্থকরা কাঁঠালবাড়ী বাজারে গাছের গুঁড়ি ফেলে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে। তারা প্রার্থীকে উদ্ধারের দাবি জানায়। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধরা সড়ক অবরোধ করে। পরে পুলিশ আব্দুল হককে বাজারটিতে নিয়ে গেলে বিক্ষুব্ধরা সাত ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেয়।
বগুড়া : শেরপুরের সীমাবাড়ী ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গৌরদাস রায়ের নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুরসহ আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে কার্যালয়ের চেয়ার, টেবিল, কাপড় ও পোস্টার পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গতকাল ভোররাতে সীমাবাড়ীর সোবাহান মোড়ে ঘটনাটি ঘটে। গৌরদাস রায় চৌধুরী বলেন, প্রতিপক্ষের দুষ্কৃতকারীরাই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পিরোজপুর : পিরোজপুরের শঙ্করপাশা ইউনিয়নে গতকাল রাতে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত নৌকার প্রচার মিছিলে হামলায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং সাবেক ভিপি ফয়সাল মাহাবুব শুভ ও মেহেদী হাসান গুলিবদ্ধসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ দুজনকে পিরোজপুর হাসপাতাল থেকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ : রায়গঞ্জের সোনাখাড়া ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু হেনা মোস্তফা কামাল রিপনের নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার রাতে নিমগাছি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। রিপন বলেন, আগুনে কিছু প্লাস্টিকের চেয়ার ও কার্যালয়ের সামনে টাঙিয়ে রাখা নৌকার প্রতিকৃতি পুড়ে গেছে। তাঁর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ছানার সমর্থকরা ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তবে ছানা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আপনার মতামত জানান