‘ওসি’ ধর্ষণ মামলার স্বাক্ষীকে আসামীর হাতে তুলে দিল
পাবনার মালিগাছি ইউনিয়নে সম্প্রতি সংঘটিত একটি ধর্ষণ মামলার ব্যাপারে তদন্তের কথা বলে মুঠোফোনে স্বাক্ষীকে ডেকে এনে ধর্ষণ মামলার আসামীর হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সদর থানার ওসি খাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
এ সময় ওসির উপস্থিতিতে ধর্ষণ মামলার সাক্ষীকে আব্দুল আলিমকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে মামলার প্রধান আসামি মালিগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের লোকজন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত হামলার ওই ছবি ছড়িয়ে পড়লে এলাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অবিলম্বে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মী ও স্থানীয়রা।
গত শুক্রবার, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। পাবনা সদরের গাছপাড়া এলাকার একটি দোকানের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে এই হামলার ঘটনা। হামলার শিকার ধর্ষণ মামলার সাক্ষী আব্দুল আলিমের অভিযোগ, সম্প্রতি মালিগাছি ইউনিয়নে সংঘটিত একটি ধর্ষণ মামলার ব্যাপারে তদন্তের কথা বলে মুঠোফোনে তাঁকে ডেকে নেন সদর থানার ওসি খাইরুল ইসলাম।
এরই একপর্যায়ে আব্দুল আলিমের ওপর হামলা চালায় মামলার প্রধান আসামি মালিগাছি ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলামের লোকজন। তবে এ সময় তাঁকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি কোনো পুলিশ সদস্য। পরে আলীমকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হামলার শিকার ও ধর্ষণ মামলার সাক্ষী আব্দুল আলীম বলেন, ‘সন্ধ্যার পর আমার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। ছয়জনকে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে পাঁচজন সাক্ষীর সাক্ষ্য লেখা হয়। ছয় নম্বরের সাক্ষী লেখার সময় আমার উপর আক্রমণ হয়, মারধর হয়। তখন ওসি স্যার, ওসি স্যারের মতো চইলে যায়, আমাকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টা করেনি।’
আব্দুল আলীমের মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ছেলে তো কোনো দোষ করেনি। আমার ছেলেকে মারধর করা হলো।’
‘ওসির সামনেই সন্ত্রাসীরা আব্দুল আলীমের উপর মারধর শুরু করে দিলেন। তারপর তাঁরা বাইর হয়ে চলে গেলেন’, বলছিলেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী যুবক।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আতঙ্ককর পরিস্থিতি তৈরি করে ২০-২৫ জন ছেলেপেলে এসে মারধর শুরু করে। এ সময় ওসি স্যার সেখান থেকে চলে গেছে।’
বিষয়টি অস্বীকার করে এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে রাজি হননি মালিগাছি ইউপি চেয়ারম্যান।
এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা। স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী মুজতাবা আব্দুল আহাদ বলেন, ‘যিনি এই দায়িত্বে ছিলেন, তিনি যদি সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন না করে থাকেন তাহলে উচিত তা বিভাগীয়ভাবে তদন্ত করা, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
এদিকে, হামলার ঘটনা আকস্মিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত দাবি করে পাবনার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলছেন, এ বিষয়ে পুলিশের গাফিলতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল গাড়ি, ওসি সদর এবং সার্কেল এএসপি সেখানে গিয়েছেন। আমার গোচরে আসলে আমি ডিবি পুলিশকে সেখানে পাঠিয়েছি এলাকায় টহল দেওয়ার জন্য নিরাপত্তার খাতিরে।’
হামলার শিকার ধর্ষণ মামলার সাক্ষী আব্দুল আলিমের স্ত্রী গতকাল সোমবার দশজনের নাম উল্লেখসহ কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। এর মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সংবাদটি শেয়ার করুন
আপনার মতামত জানান